বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৃষ্টিহীন রাজশাহীতে বাড়ছে তাপমাত্রা

  •    
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ১৭:১৬

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা নদীর পানি কমে যাওয়া, খাল-বিল-জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যাওয়া, ভূমিরূপের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত ব্যবহার, মৌসুমী বায়ু প্রবেশে বাধাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে এ অঞ্চল ক্রমান্বয়ে দেশের সবচেয়ে তাপ ও খরাপ্রবণ এলাকা হয়ে উঠছে।

আগুনঝরা আবহাওয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহী। দাবদাহে শুকিয়ে গেছে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়। কাঠফাটা গরমে অতিষ্ঠ মানুষ, স্বস্তিতে নেই পশু-পাখিও। এ অবস্থার কারণ বৃষ্টি নেই।

শীতের শেষে সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়। শীতল হয় প্রকৃতি। কিন্তু এ বছর মার্চ-এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এর প্রভাবে ভ্যাপসা গরমে অস্থির হয়ে উঠেছে মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা নদীর পানি কমে যাওয়া, খাল-বিল-জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যাওয়া, ভূমিরূপের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত ব্যবহার, মৌসুমি বায়ু প্রবেশে বাধাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে এ অঞ্চল ক্রমান্বয়ে দেশের সবচেয়ে তাপ ও খরাপ্রবণ এলাকা হয়ে উঠছে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য মতে, কয়েক দিন ধরেই এখানকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশপাশে রয়েছে। প্রতিদিনই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা।

ভোরে সূর্য ওঠার সময়ও তাপমাত্রা থাকছে অস্বাভাবিক। সাধারণত এ সময় তাপমাত্রা ২২/২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। তবে এখন কোনো কোনো দিন তাপমাত্রা ২৬/২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন ধরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে ২২ ডিগ্রির উপরে।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে রাজশাহী অঞ্চলে হালকা ঝড়ো বৃষ্টি হওয়ায় বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার পরিমাণ কমে গেছে। এতে সূর্যের তাপ সরাসরি মাটিতে পড়ছে। ফলে দ্রুত ভূমি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড শুষ্কতা ও দাবদাহের কারণে বাতাসে জলীয় কণা শূন্য হয়ে গেছে। বাতাসে আর্দ্রতা কম। মরুভূমিতে যে ধরনের শুষ্ক ও তীব্র রুক্ষতার প্রবণতা থাকে, রাজশাহীতেও তেমন দেখা যাচ্ছে।

রহিদুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি। কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে কিন্তু হচ্ছে না। যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত মার্চ মাসে রাজশাহীতে কোনো বৃষ্টি হয়নি। এপ্রিলে হয়েছে সামান্য। এটা অস্বাভাবিক। আগের বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করতে গেলে দেখা যায় বৃষ্টিপাত অনেক কমেছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যও বলছে, রাজশাহীতে গত কয়েক বছরে তাপদাহ বেড়েছে। কমেছে বৃষ্টি।

২০১৯ সালের মার্চে এখানে বৃষ্টি হয় ৬৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার। এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১১৩ দশমিক ৯ মিলিমিটার। ২০২০ সালের মার্চে বৃষ্টি হয় ২৮ দশমিক ৫ মিলিমিটার। এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩২ দশমিক ৭ মিলিমিটার।

অথচ চলতি বছর মার্চ-এপ্রিল পার হয়ে গেল কিন্তু বৃষ্টির দেখা সেভাবে মিলল না। এ বছর মার্চ মাসে এক দিনও বৃষ্টি হয়নি। আর এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৫ মিলিমিটার। এই সামান্য বৃষ্টি পরিবেশের ওপর তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি।

এদিকে গত তিন বছরের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এ বছর তাপমাত্রা আগের দুই বছরের থেকে বেশি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২০ সালের মার্চে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি। অথচ এ বছর মার্চে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি। এপ্রিলেও একই অবস্থা। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ ডিগ্রি, ২০২০ সালের এপ্রিলে উঠেছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি। আর চলতি এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিককতার কারণ সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, পদ্মা নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যাওয়া, ভূমিরূপের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন, ভূ-গর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। এর ফলে এমন ভারসাম্যহীন আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর থেকে বৃষ্টির বলয় সরাসরি বাংলাদেশে প্রবেশ না করে ভারতের উড়িষ্যা-বিহার এলাকায় প্রবেশ করছে। এতে মৌসুমি বায়ু এই অঞ্চলে ঢুকতে পারছে না।

রাজশাহী অঞ্চলে খরার প্রবণতা অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। আগাম খরা শুরু হয়ে তার সময়কালও দীর্ঘ হচ্ছে। এতে ঋতু বৈচিত্র্যের পরিবর্তন এসেছে। যার কারণে আগাম খরা দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এই আবহাওয়া পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা নিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। গাছপালা লাগিয়ে সবুজায়ন করতে হবে। খাল-বিল, নদী-নালা, জলাশয় যেন শুকিয়ে পানিশূন্য না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এর কোনো একটিতে ব্যর্থ হলে আবহাওয়ার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

এ বিভাগের আরো খবর