বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২১ ২২:৩৮

সেই রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা ওই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৪০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার এবং এ কারণে সৃষ্ট ৬ মিটার বা ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। ওই ঘূর্ণিঝড়ে মারা যায় প্রায় ২০ লাখ গবাদিপশু।

২৯ এপ্রিল অসংখ্য উপকূলবাসীর স্বজন হারানোর দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে উপকূলে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়। কক্সবাজারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেই ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে পড়লে এখনও গা শিউরে ওঠে ভুক্তভোগীদের।

ভয়াল সেই দিনের স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও কাঁদে স্বজনহারা উপকূলবাসী। বাংলাদেশে আঘাত হানা ১৯৯১ সালের এই ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর একটি।

সেই রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা ওই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৪০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার এবং এ কারণে সৃষ্ট ৬ মিটার বা ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। ওই ঘূর্ণিঝড়ে মারা যায় প্রায় ২০ লাখ গবাদিপশু।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলের মানুষরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা। এসব উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করার কথা বলছেন পরিবেশবাদীরা।

ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

ছবি: সংগৃহীত

কালারমারছড়া, কুতুবজোম, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় গবাদি পশু ও ফসলের। অনেকে হারিয়েছে মা-বাবা, আবার কেউ কেউ বুকের ছোট্ট শিশুকে।

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুতুবদিয়ার খুদিয়ারটেক এলাকার বাসিন্দা মুহিব উল্লাহ বলেন, সেই রাতের কথা মনে পড়লে তার আর ঘুম আসে না। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর।

কুতুবদিয়ার খুদিয়ারটেক এলাকার বাসিন্দা মুহিব উল্লাহ

প্রতিদিনের মত খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাচ্ছিলেন মুহিব। হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে আর ঘুমাতে পারেননি। মূহুর্তের মধ্যে সব লন্ড-ভন্ড হয়ে যায়। এরপর খুঁজে পাননি তার মা-বাবা আত্মীয় স্বজনদের।

১৯৯১ সালের সেই ঘূর্ণিঝড়ে এ জেলার প্রায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষ মারা যান।

ঘরবাড়ি হারায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। কিন্তু ২৮টি বছর পার হলেও ঘূর্ণিঝড়ের সেই ক্ষত রয়ে গেছে উপকূলবাসীর। এখনও ভাঙা বেড়িবাঁধের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বেশি ক্ষতি হয় মহেশখালীর ধলঘাটা ও মাতারবাড়ী এই দুই ইউনিয়নে।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের পর বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে ৮৪ টি সাইক্লোন শেল্টার (আশ্রয়কেন্দ্র) স্থাপন করা হয়েছে।

এ সব আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের অভাবে প্রায় ৩৩টি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েকটি নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। মহেশখালী উপজেলার বর্তমান প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস হলেও জনসংখ্যা অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্রর সংখ্যা কম।

কক্সবাজার (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপজেলার উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষার্থে বেড়িবাঁধের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। তবে ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও কুতুবদিয়ায় যেসব বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে, আগামীতে সেগুলির পুনর্নিমানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‘এ সরকারের আমলে বেড়িবাঁধের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বলেই আজ দলঘাটাও মাতারবাড়ি দ্বীপে কয়লা বিদ্যুতের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।’

মহেশখালী দ্বীপে বাস্তবায়নাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল, এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন ও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং উপকূলে বসবাসকারীদের জানমাল রক্ষার্থে আগামীতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান সাংসদ আশেক উল্লাহ।

স্বজন হারানোর এই দিনে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় সরকারি, বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন সংগঠন নিহতদের স্মরণে প্রতিবছর দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করলেও গত বছর থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের কারণে এসব অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর