নওগাঁর পত্নীতলায় এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পত্নীতলা থানায় সালিসের সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মারধরে দুইদিন আগে তিনি আহত হন।
আহত কৃষক হামিদুর রহমানকে বুধবার ভোরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়ার সময় মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় হামিদুরের স্বজনরা ওসি শামছুল আলমের বিচার দাবিতে মরদেহ নিয়ে পত্নীতলা থানা চত্বরে অবস্থান নেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি তড়িঘড়ি করে নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
নিহতের পারিবারের সদস্যরা জানান, স্ত্রী ফাহিমার সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দিলে কিছু দিন আগে তাকে তালাক দেন উপজেলার বোরাম গ্রামের হামিদুর। এ ঘটনায় ১০ দিন আগে ফাহিমা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ দেন। পরে পত্নীতলা থানা পুলিশ রোববার হামিদুরকে বাড়ি হতে তুলে নিয়ে যায়।
তারা অভিযোগ করেন, এ নিয়ে থানায় সালিশ বৈঠকে হামিদুর স্ত্রীকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে ওসি শামসুল আলম ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে হামিদুরের মাথা ইটের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে হামিদুরের খালাতো ভাই ফারুক হোসেন ও প্রতিবেশী নইমুদ্দিন তাকে প্রাথমিক চির্কৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে যান।
স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার হামিদুরের অবস্থার অবনতি হলে তাকে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় অ্যামুলেন্সে মরদেহ নিয়ে পত্নীতলা থানায় গিয়ে ওসির বিচার দাবি করেন স্বজনরা।
হামিদুরের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওসি বুকে লাথি-কিল, ঘুষি ও দেয়ালে তার মাথা জোরে আঘাত দেয়ায় মৃত্যু হয়েছে।’
খালাতো ভাই ফারুক হোসেন জানান, মারধরের সময় ওসির দুইবার হামিদুরের মাথা ইটের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দেয়ায় তিনি গুরুতর আহত হয়। এক পর্যায়ে পিটুনির ভয়ে সে স্ত্রীকে গ্রহণ করতে রাজি হলেও ওসি ছেড়ে দেয়নি।
তিনি অভিযোগ করেন, মরদেহ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুষ্ঠু বিচারের জন্য। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার রাকিবুল আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে পত্নীতলা থানার ওসি শামসুল আলম দাবি করেন, সমঝোতার জন্য হামিদুরকে থানায় ডেকে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাকে থানায় কোনো মারধর করা হয়নি।
থানায় মারধরে আহত হলে তাকে সেখান থেকেই হাসপাতালে নেয়া হতো দাবি করে তিনি বলেন, ঘটনার তিন দিন পর অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপরও এ ঘটনায় অভিযোগ ওঠায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।