ফরিদপুরের উৎপাদিত পাটের সুনাম দীর্ঘদিনের। কিন্তু চলতি পাট মৌসুমে প্রচণ্ড খরায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তীব্র তাপদাহে ক্ষেতে পাট গজানো এবং বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ভাবে আরও কিছুদিন চললে উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট পাট আবাদের লক্ষ্য ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত চাষিরা ৮৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন। জেলার নয় উপজেলার মধ্যে বোয়ালমারী, নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী, ফরিদপুর সদর ও ভাঙ্গা উপজেলাতে বেশি পাটের আবাদ হয়।
জেলার সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পাটচাষিরা দিনরাত জমির যত্ন নিচ্ছেন। কিন্তু তীব্র গরমে পাট বেড়ে উঠতে পারছে না। পাট বাঁচাতে অনেকেই শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন।
কথা হয় সালথার পাটচাষি রহিম মোল্লা, আফতাব শেখ, দেলোয়ার মাতুব্বরসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, এমন খরা আগে দেখেননি। এই খরা পাটের ক্ষতি করছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে জমিতে বার বার সেচ দিতে হচ্ছে।
মধুখালী উপজেলার পাটচাষী আশুতোষ বিশ্বাস জানান, খরার কারণে পাট গজাচ্ছে না। কেউ কেউ জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়।
জমির যত্ন বাড়িয়েছেন চাষিরা। ছবি: নিউজবাংলা
ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (পিএসও) ড. রনজিৎ কুমার ঘোষ জানান, প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে। এটা পাটের জন্য ক্ষতিকর। তবে যাদের সেচের ব্যবস্থা রয়েছে তারা কয়েক দফা সেচ দিলে কিছুটা পরিত্রাণ পাবেন।
তিনি আরও জানান, প্রচণ্ড খরায় পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। সে জন্য ক্ষেতে নিড়ানি ও সেচ দিতে হবে। কারণ দিনের বেলায় পোকাগুলো মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে, সন্ধ্যা হলেই বেরিয়ে আসে। এই পোকাগুলো পাটের কচি পাতা ও ডগা কেটে দেয়।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী জানান, চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে পাটের লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বোরো ধানকাটা হয়ে গেলেই চাষিরা পাটের আবাদ শুরু করবেন। আশা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরের ইনচার্জ সরুজুল আমিন জানান, সপ্তাহখানেক ধরে গড়ে তাপমাত্রা রয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে। এমন তাপদাহ আগে খুব একটা হয়নি।
তিনি জানান, এই ধরনের তাপদাহ আরও কয়েকদিন চলবে। তারপর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।