ময়মনসিংহে লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে বের হওয়া পথচারীদের তীব্র রোদের মধ্যে প্রায় আধাঘণ্টা রাস্তায় বসিয়ে রেখেছে পুলিশ। নগরীর নতুন বাজার মোড়ে বুধবার দুপুরে এই চিত্র দেখা যায়।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী জানান, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে তারা আজ (বুধবার) থেকে কঠোর অবস্থানে গেছেন। মাস্ক ছাড়া বের হওয়ায় পথচারীদের ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট মাস্ক পরিয়ে রাস্তায় বসিয়ে রেখে সাময়িক শাস্তি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটা সচেতনতার জন্য করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ থেকেই সাধারণ মানুষ শিক্ষা নেবেন ও নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মানবেন। তা না হলে আরও কঠোর হবে পুলিশ।’
এই শাস্তির আওতায় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০ জনকে মাস্ক পরিয়ে রাস্তায় বসিয়ে রাখা হয়।
জেলার আবহাওয়া অফিসে তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহে বুধবার তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে রোদের প্রচণ্ড তাপের মধ্যে পথচারীদের প্রায় আধাঘণ্টা বসিয়ে রাখার আইনি ব্যাখ্যা দিতে পারেনি পুলিশ।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শাহজাহান মিয়ার দাবি, যে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আইনি ক্ষমতা তাদের আছে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাস্ক পরা নিশ্চিত করার জন্য আমরা এভাবে বসিয়ে, দাঁড় করিয়ে, প্রয়োজনে শুইয়ে রাখতে পারি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আমরা এটা করতেই পারি।’
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর কোনো ধারায় অবশ্য এ ধরনের শাস্তির বিধান পাওয়া যায়নি।
এ আইনের ২৪(১) ধারায় ‘সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং তথ্যগোপন’ এর অপরাধের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটিতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।’
এই অপরাধের দণ্ড হিসেবে ২৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
মাস্ক না পরলে জরিমানা বা কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও সেটি কেন অনুসরণ করা হয়নি, এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে।’
একই প্রশ্নে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের ভালোর জন্যই এই কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ রোদে বসিয়ে রেখে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। শুধু তারাই যে রোদে কষ্ট করেছে তা নয়, পুলিশও রোদে ছিল।’
কড়া রোদে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে মানুষের মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, চর্মরোগসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম।