মোহাম্মদ নাদিম থাকেন সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া এলাকায়। পাঁচজনের সংসার তার। ভিডিও ধারণ করে যে টাকা আয় করেন, তা দিয়ে চলে সংসার।
করোনা মহামারির কারণে রোজগার নেই বললেই চলে। গত এক বছরের আর্থিক সংকট বিপর্যস্ত করেছে তাকে। ধার করে চলতে হচ্ছে। কত দিন এভাবে চলতে পারবেন ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না।
নাদিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ কাজ করি আমি অন্তত ২০ বছর ধরে। এই রকম সংকটে আগে কখনো পড়িনি। একটা বছর গেল। ভিডিওর কাজ হয়নি। বসে থাকতে হয়েছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বিয়েসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হয়নি। আমাদেরও ডাক পড়েনি।
‘অথচ স্বাভাবিক সময়ে মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা উপার্জন করতাম। করোনার বছরটি হাহাকার অবস্থায় গেছে। কাউকে বলতেও পারছি না, আবার সহ্যও করতে পারছি না। এ হলো আমাদের অবস্থা।’
সৈয়দপুর শহরের শহিদ ডা. জিকরুল হক সড়কের সুজন ভিডিওর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সুজন। তিনি বলেন, ‘আমার এখানে চারজন কাজ করেন। তারা প্রত্যেকে ভিডিও ধারণ করে এনে দেন। ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকেন তারা। কিন্তু করোনা তাদের উপার্জন গ্রাস করেছে।
‘পাশাপাশি ব্যবসায় ধস নামায় আমিও চলতে পারছি না। আর্থিক অনটনে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছি। এবার নতুন করে লকডাউনে মাথায় হাত পড়েছে আমাদের সবার।’
তিনি বলেন, ‘আমার ১৭ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে করোনার বছর ইতিহাস। আমরা এমন মানুষ, কারও কাছে হাত পাততেও পারি না, আবার কেউ আমাদের দেয়ও না।’
আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘কেউ ভাবেনি আমাদের কথা। সরকারের এত সুবিধা, আমরা কিছু পাইনি।’
এ পেশায় নিয়োজিতরা বলছেন, করোনার কারণে সব ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় হয়নি বিয়ে, খৎনা, আকিকা, জন্মদিন, বউভাতসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি ক্রীড়ানুষ্ঠানও।
গত বছরের মার্চে লকডাউন শুরু হওয়ার পর ভাটা শুরু হয় এ কাজে। লকডাউন উঠে গেলেও জনসমাগম এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শে তেমন অনুষ্ঠান হয়নি নীলফামারীতে।
এ কারণে ভিডিও ধারণ বা চিত্র ধারণে কদর ছিল না এ পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের এপ্রিলে এসেও একই অবস্থা।
মোহাম্মদ ভুলু বলেন, ‘করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে মানুষ পেয়েছে। কিন্তু আমরা এই সুবিধা পাইনি।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাব যেন আমাদের বিষয়টি একটু সদয় দৃষ্টিতে দেখেন।’
রমজান ফটোগ্রাফির স্বত্বাধিকারী রমজান আলী বলেন, ‘গোটা জেলায় ৩৫০ জন রয়েছেন, যারা প্রত্যক্ষভাবে এই পেশার সাথে জড়িত। তারা এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আমরা শেষ হয়ে গেছি। অনুষ্ঠান বন্ধ, ডাকা হয় না আমাদের। ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে না। আমরা চলব কী করে!
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা ভিডিও ব্যবসায়ীরা অনুরোধ করব, যাতে আমাদের জন্য কিছু করা হয়। কারণ, আমাদেরও পরিবার আছে। আমাদের খেয়ে-পরে বাঁচতে হয়। আমাদের চাওয়ার আর জায়গা নেই।’