এবার বৈশাখের প্রথম দিনে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। গরমও পড়েছে সেই সঙ্গে। এই সময়ে বাজারে উঠেছে রসালো ফল তরমুজ। রমজান আর গরমের কারণে এর চাহিদাও তুঙ্গে।
তরমুজের চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা মাত্রাতিরিক্ত দাম চাইছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তরমুজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা কম দামে পিস হিসেবে তরমুজ কিনে বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। এতে একটি তরমুজ ক্রেতাদের কিনতে হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। ফলে অবস্থাপন্নরা কিনতে পারলেও, সাধারণ মানুষ আর কিনে খেতে পারছে না ফলটি। এ নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তাই তরমুজের দাম নিয়ন্ত্রণে শুরু হয়েছে অভিযান। মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। এ সময় ব্যবসায়ীদের নানা অংকের অর্থ জরিমানা করা হয়।
বরিশাল: মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বাজারে দুটি অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাহাতুল ইসলাম ও জাভেদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথক এই অভিযান পরিচালিত হয়।
নগরীর পোর্ট রোড, ফলপট্টি, বটতলা বাজার, মেডিকেল কলেজ, নতুন বাজার, রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড, সাগরদী বাজার এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ সময় বাজারে অবস্থানরত ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করার অপরাধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাভেদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ জন ব্যবসায়ীকে ১ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাহাতুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযানে বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করার অপরাধে ২ জন ব্যবসায়ীকে ১ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
ময়মনসিংহ: মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর চরপাড়া মোড় ও নান্দাইন উপজেলায় পৃথক অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তখন ১৪ ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করার পর তরমুজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসার কথা। তবে দাম আসলেই কমেছে কিনা সরেজমিনে জানতে বিকেল তিনটার দিকে নগরীর চরপাড়ায় দেখা যায় শত শত তরমুজ নিয়ে বিক্রেতারা বসে আছেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা খুব কম।
এ সময় দেখা যায়, তরমুজের দাম এক টাকাও কমেনি। আগের দামে অর্থাৎ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। বিক্রেতারা যেন তাদের জরিমানার টাকা উশুল করতেই ব্যস্ত। ক্রেতারা এসে দামাদামি করে অনেকে তরমুজ না নিয়েই ফিরে গেছেন।
পটুয়াখালী: জেলার মির্জাগঞ্জে ওজনে তরমুজ বিক্রির অভিযোগে তিনজন তরমুজ ব্যবসায়ীকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাচটার দিকে উপজেলার সুবিদখালী বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করার সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হান উজ্জামান এ জরিমানা আদায় করেন।
তিনি জানান, রমজান ও ধারাবাহিক অধিক দাবদাহের কারণে একটু স্বস্তি পেতে এবার ক্রেতাদের কাছে তরমুজের চাহিদাও বেশি। এই চাহিদাকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে তরমুজ বিক্রি করায় ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যে কারণে তরমুজ বাজারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সমন্বয়ক মো. আল-আমিন ও থানা পুলিশের সদস্যরা।
কিশোরগঞ্জ: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মঙ্গলবার বেলা ৩ টায় শহরের স্টেশন রোড ও কাচারী বাজার এলাকায় তরমুজের আড়তে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় স্টেশন রোডের ৩ টি ও কাচারী বাজারের ২ টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ অভিযান পরিচালনা করেন কিশোরগঞ্জের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক। এ সময় কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ফারজানা খান ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এস আই) রুকন উদ্দীন সহ জেলা পুলিশ লাইনের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।
তবে এমন অভিযান পরিচালনা করায় সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অভিযানের ফলে তারা ন্যায্যমূল্যে তরমুজ কিনতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
সদর উপজেলার বৌলাই এলাকা থেকে তরমুজ কিনতে এসেছিলেন আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অভিযানের ৩০ মিনিট আগেও দোকানি যে তরমুজের দাম চেয়েছিল ৩৫০ টাকা, ভোক্তা অধিদপ্তর অফিসের লোক দেখেই সেই তরমুজের দাম কমে হয়ে গেছে ১২০ টাকা। তিনি বলেন, ‘সুযোগ পেয়ে আমিও তিনটা তরমুজ কিনে নিলাম। আমার সাথে আরো অনেকেই কিনেছে।’
তবে এমন দাম কিছুক্ষণ পরেই থাকবে না বলেও জানান একাধিক ক্রেতা। তারা এও বলেন, ‘এমন অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করলে কোনো ফলই ভোক্তাদের নাগালের বাইরে যাবে না।’
ফরিদপুর: মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল ইসলাম।
অভিযানে বাজারে অবস্থানরত ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন তরমুজ ব্যবসায়ীরা পিস হিসেবে আড়ত থেকে তরমুজ কিনে ক্রেতাদের কাছে কেজি হিসেবে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় একলাস মিয়া নামে এক তরমুজ ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে বাজারের অন্য সব ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়।
তিনি জানান, বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে এ ধরনের অভিযান সব সময় অব্যাহত থাকবে।