ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চীনামাটির পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ এগ্রো সিরামিক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পুটিমারি বাজারের পাশেই চীনামাটির পাহাড়। অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়টির উত্তরে ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা গারো পাহাড়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইচ্ছেমতো পাহাড় কাটার ফলে অসংখ্য বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মাটি কাটার কারণে তৈরি গর্ত সাধারণ মাটি দিয়েও ভরাট করা হয়নি। চীনামাটির এই পাহাড় কতটুকু কাটা হবে, মাটি কী পরিমাণ নেয়া যাবে এবং কতদিন মাটি কাটা যাবে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে তেমন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, চীনামাটির পাহাড়টি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন লোকজন। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এর সৌন্দর্য। কমছে পর্যটনের সম্ভাবনা।
তারা জানান, ২০১৪ সালে মাটি ধসে এক শ্রমিকের মৃত্যু হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জমান খান মাটি কাটা সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে পরে আবারও শুরু হয় পাহাড়ের মাটিলুট।
নির্বিচারে পাহাড় কাটায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতা হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ এগ্রো সিরামিক নামের কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় থেকে চীনামাটি হরিলুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এই কোম্পানিটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেই।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘চীনামাটির পাহাড় আমাদের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা। প্রতি বছর দূর-দুরান্ত থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসে। কিন্তু চীনামাটি লুটের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে পর্যটনের সম্ভাবনা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, ‘আগে কোনো কোম্পানি মাটি কাটার ছাড়পত্র পেলে আমাকে জানাতো। তবে এখন তারা মাটি উত্তোলন করলেও জানায় না।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের কোথাও চীনামাটির পাহাড় কাটার অনুমোদন নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেয়নি বাংলাদেশ এগ্রো সিরামিক। তবে হাইকোর্ট থেকে রিট নিয়ে দেদারসে কাটছে চীনামাটির পাহাড় কাটছে তারা।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফিকুজ্জামান বলেন, ‘মাটি উত্তোলন দেখাশোনার জন্য খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন লোক রয়েছে। তবে অতিরিক্ত মাটি নেয়ার অভিযোগ পেলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এগ্রো সিরামিকস কোম্পানির মালিক গোলাম কিবরিয়া তপন বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা মেনে মাটি কাটা হচ্ছে।’
ছাড়পত্র ছাড়া পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, ‘খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তা এসে ডিসি অফিসে মিটিং করে রেজুলেশন করে ওই কোম্পানিকে মাটি কাটার অনুমতি দেয়। ওই মিটিংয়ে আমরা সবসময় বলেছি পরিবেশের ছাড়পত্র নিতে। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে কাগজ নিয়ে আসার ফলে আমরা কিছু করতে পারছিনা।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশে সব পাহাড়েই মাটি কাটা বন্ধ আছে। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে চীনামাটি তোলার জন্য অনেকে আবেদন করেছে। তবে আমরা অনুমতি দেইনি। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় চীনামাটির পাহাড় কেটে মাটি নেয়ার জন্যেও বেশ কয়েকজন আবেদন করেছে। এখানেও আমরা কাউকে অনুমতি দেইনি।’
ছাড়পত্র ছাড়া কী পরিমাণ মাটি কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই তথ্যের ফাইল আমাদের অফিসে নেই। সম্পূর্ণ বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সমর কান্তি বসাক কথা বলতে অপারগতা জানান। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার ভালো বলতে পারবেন।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘আমাকে একটু আগে ইউএনও জানিয়েছে কাজ বন্ধ আছে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন এখন বন্ধ রয়েছে।’