ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা কমিটির সহকারী প্রচার সম্পাদক মুফতি জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলা শহরের জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে রোববার রাত ১১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তাণ্ডবের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুফতি জাকারিয়ার আগে হেফাজতের কোনো নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এর আগে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে দুই ইমামসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্যগুলো জানানো হয়েছে।
তাতে বলা হয়, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় মোট ৫৬টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইলে ২টি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা হয়েছে।
এই মামলাগুলোয় ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মুফতি জাকারিয়া হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত ছিল। এখন পর্যন্ত ৩৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘পুলিশ ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করছে। তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করে আগুন দেয়। পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তরে।
রাস্তার পাশের দোকান থেকে ফ্রিজ নিয়ে এসে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন হেফাজত কর্মীরা। ফাইল ছবিহামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে এক ব্যক্তি নিহত হন।
পরদিন মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে মাদ্রাসাছাত্রদের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান পাঁচজন।
নিহত ব্যক্তিদের নিজেদের কর্মী দাবি করে প্রতিবাদে ২৮ মার্চ হরতাল ডাকে হেফাজত। হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে ব্যাপক তাণ্ডব। বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সবগুলো স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।
হামলা চলে পৌরসভা কার্যালয়, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, গণগ্রন্থাগার, সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন’, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এবং সরাইলের খাটিহাতা হাইওয়ে থানায়।