আধুনিক কৃষি মার্কেটের দোতলা ভবনের নিচতলাতে রয়েছে ৩০টি মৎস্য ও সবজির আড়ৎ। কিন্তু তার ২৫টিই ফাঁকা পড়ে আছে। বাকি ৫টি মৎস্য আড়তে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য। সেখানে একবারে শূন্য পড়ে আছে কৃষি উপকরণ ও গো-খাদ্য বিক্রির দোকান। বরফকল, হিমাগার, ফিশ প্রসেসিং সেন্টার ও ডিপো কাজে আসছে না।
তবে মার্কেটের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে থাকা ‘চিলিং সেন্টার’ এ প্রতিদিন কেনাবেচা হচ্ছে অন্তত দুই হাজার লিটার গরুর দুধ। ডুমুরিয়া উপজেলায় খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে নির্মিত আধুনিক মানের দৃষ্টিনন্দন এ ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’-এর এখন এই হাল। যে লক্ষ্যে মার্কেটটি গড়ে তোলা হয়েছে সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না।
স্থানীয় কৃষক রোকনুজ্জামান বলেন, ‘মার্কেটটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল এলাকার তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে সরাসরি কৃষিপণ্য ফলমূল, শাকসবজি, দুধ, মাছ ইত্যাদি কেনা। এরপর তা দেশের বিভিন্ন শহরের সুপার শপে বিক্রি করা। বিদেশেও রপ্তানি করার ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু কোনো উদ্দেশ্যই সফল হচ্ছে না।’
মার্কেটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ব্যবসার তুলনায় কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে ‘গুরুত্ব’ দেয়ায় মার্কেট জমছে না। বিশেষ করে ডিজিটাল মিটারে স্বচ্ছ পরিমাপ ব্যবস্থা থাকায় অনৈতিক সুযোগ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে তারা এখানে ব্যবসা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আড়তদাররা এখানে আসছে না মূলত ‘অধিক মুনাফা’ করার সুযোগ না থাকায়। আর দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি কৃষকরা। তারা চাইলেও মার্কেটে পণ্য সরবরাহ করতে পারেন না। পরিস্থিতি বদলাতে নতুন করে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
২০১৫ সালে ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামের শেখ বাড়ির সামনে ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’ নামের এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’ নামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দুই একর ১০ শতক জমির ওপর নেদারল্যান্ডসের দেয়া ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মার্কেটটির নির্মণকাজ শুরু হয়।
প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় তিনটি মাছের ডিপো, দশ হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতার বরফ মিল, ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল রুম, ফিস ও ভেজিটেবল প্রসেসিং জোন, ২০টি মৎস্য আড়ৎ, দশটি সবজি আড়ৎ, দুটি কৃষি উপকরণ বিক্রির দোকান, গো-খাদ্য বিক্রির দোকান, হিমাগার, চিলিং সেন্টার, ব্যাংক, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অফিস সিকিউরিটি রুমসহ প্রয়োজনীয় আরও অনেক স্থাপনা।
নির্মাণকাজ শেষে বিশেষায়িত মার্কেটটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু করা হয়। কিন্তু এখনও মার্কেটটি জমেনি।
রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ আড়ৎ খালি পড়ে রয়েছে। ৫/৬ টি আড়তে সামান্য পরিমাণ মাছ এসেছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। মৎস্য ও সবজি বাজার প্রায় ক্রেতা-বিক্রেতাশূন্য। তবে চিলিং সেন্টারে ‘ব্র্যাক ডেইরি অ্রান্ড ফুড প্রজেক্ট’-এর আওতায় খামারি ও তাদের প্রতিনিধিরা দুধ বিক্রি করছেন।
ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্ট-এর ল্যাব টেকনোলোজিষ্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন চিলিং সেন্টারে দুই হাজার লিটার দুধ বেচাকেনা হচ্ছে। ফলে খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। চিলিং সেন্টারের কারণে এখনও মার্কেটটি টিকে আছে।’
মার্কেট পরিচালনায় যুক্ত প্রতিষ্ঠান সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার অপারেশন ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মার্কেটে সিসি ক্যামেরা ও ব্যাংকসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু মার্কেটটি প্রধানত দুটি কারণে জমানো সম্ভব হচ্ছে না।
‘প্রথম কারণ হচ্ছে ডিজিটাল মিটারে শাকসবজি, ফল ও মাছ পরিমাপ করা হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা ওজনে বেশি নিতে পারছেন না। আশপাশের অন্য মার্কেটে ডিজিটাল মিটার নেই। দ্বিতীয়ত দাদনের ব্যবসা। যেমন ডুমুরিয়া, খর্ণিয়া, থুড়কাসহ অন্যান্য মার্কেটে আগে থেকে কৃষকের কাছে দাদন দেয়া হয়। ফলে কৃষকরা ইচ্ছা থাকলেও এ মার্কেটে আসতে পারছেন না।’
আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এ মার্কেটি চাঙ্গা করতে এবং সমস্যার দ্রুত সমাধানে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান শহিদুল ইসলাম। বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ক্রেতা হিসেবে মার্কেটে আনার চেষ্টা চলছে।