বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোগীর স্বজনদের পাশে ‘মেহমান’

  •    
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ১১:২৬

চাল-ডাল দিয়ে তৈরি সাধারণ খিচুড়ি নিয়ে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে ‘মেহমান’ নামের সংগঠনটি। পাঁচ টাকার বিনিময়ে সদর হাসপাতালে তারা রোগীর স্বজনদের জন্য খাবার সরবরাহ করে। গত বছর করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বিনা মূল্যেই দেয়া হচ্ছে খাবার। রোজার সময় থাকে ইফতারের ব্যবস্থাও।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ইসলামপুর এলাকার শাহজাদী বেগমের ছেলের ঘরে নাতি হয়েছে। তাই বউমা দুই দিন ধরে সদর হাসপাতালে ভর্তি। তার দেখভালে ঘর আর হাসপাতালে ছোটাছুটিতে ব্যস্ত শাহজাদী বেগম। এর মাঝে নিজের খাবার তৈরি করারও তার সময় নেই।

এ নিয়ে চিন্তাও নেই। কারণ, হাসপাতালেই তিনি পাচ্ছেন খাবার, তা-ও আবার বিনা মূল্যে। যেনো হাসপাতালের মেহমান তিনি।

দুই বছর আগেও এই ব্যবস্থা ছিল না। হাসপাতালের খাবার শুধু রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকায় সঙ্গে আসা স্বজনদের পড়তে হতো বিপাকে। আবার শয্যা না পেয়ে যে রোগীরা মেঝেতে চিকিৎসা নিতেন, তারাও হাসপাতালের খাবারের আওতায় পড়তেন না। তাদের বাইরে থেকে কিনে আনতে হতো খাবার, গুনতে হতো বাড়তি খরচ।

ভোগান্তি কমাতে সদর হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের জন্য বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করে ‘মেহমান’ নামের একটি সংগঠন।

এই মেহমানেরই মেহমান শাহজাদী। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগে আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে হাসপাতালে এলে বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হতো। এক বেলা খাবার কিনতে ৮০ টাকা লাগত। এখন আর খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। হাসপাতালেই বিনা টাকায় খাবার পাচ্ছি। মানও ভালো।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে রান্নাঘরের সামনে বারান্দায় ইফতারের প্যাকেট করতে দেখা গেল ‘মেহমানের’ সংগঠকদের। রান্নাঘরে তখন প্রায় শেষ রাতের খাবারের রান্না।

বিকেল হলেই খাবারের পাতিল ও ইফতারের প্যাকেটগুলো নেয়া হয় রান্নাঘরের গেটের সামনে। সেখানে রোগীর স্বজনরা সারিবদ্ধভাবে এসে খাবার নিয়ে যান। এটা এখন হাসপাতালের নিয়মিত চিত্র।

খাবার বিতরণ করছিলেন ব্যবসায়ী মোমিনুল হক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সানোয়ার নেওয়াজসহ কয়েকজন।

সেখানে কথা হয় মেহমানের অন্যতম সংগঠক জহিরুল ইসলাম মাখনের সঙ্গে। তিনি জানান, কোনো দিন রান্না করা হয় বিরিয়ানি, কোনো দিন খিচুড়ি। কেউ নামমাত্র পারিশ্রমিকে, কেউ স্বেচ্ছাশ্রমে রান্নার কাজ করেন।

চাল-ডাল দিয়ে তৈরি সাধারণ খিচুড়ি নিয়ে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে এই অলাভজনক সংগঠন। তখন খাবারের বিনিময়ে রাখা হতো পাঁচ টাকা করে। গত বছর করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বিনা মূল্যেই দেয়া হচ্ছে খাবার। রোজার সময় থাকে ইফতারের ব্যবস্থাও।

মেহমানের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী মোমিনুল হক বলেন, ‘এ কাজ করতে আমার কোনো ক্লান্তি মনে হয় না, ভালোই লাগে। এ কাজের সঙ্গে আমি নিয়মিতই যুক্ত থাকব।’

স্কুলশিক্ষক সানোয়ার নেওয়াজ বলেন, ‘নিজের ভালো লাগা থেকেই মেহমানে আসা।’

জহিরুল ইসলাম মাখন বলেন, ‘প্রতিদিন ১০০ জনের রাতের খাবার ও ইফতার আমরা দিচ্ছি। রোজা শুরুর সঙ্গে লকডাউনে রোগীর স্বজনরা কোথায় খাবার খাবে। বাইরে অনেক খরচ হয়। সাধারণত হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়, অধিকাংশই দরিদ্র, রোগীর সঙ্গে যারা থাকেন তাদের বাইরে খেতে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়। তাদের কথা ভেবেই আমরা প্রতিদিন খাবার বিতরণ করছি।’

মেহমান চালিয়ে নিতে অর্থ জোগাড় হয় কীভাবে জানতে চাইলে মাখন বলেন, ‘শুরুর দিকে নিজেরাই সপ্তাহে তিন দিন করে খাবার দিই। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কিছু চাল বরাদ্দ এবং অনেকেই এগিয়ে আসায় সপ্তাহে পাঁচ দিন খাবার দেয়া শুরু হয়। এখন রোজার মাসে এসে আমরা প্রতিদিনই খাবার দিচ্ছি।

‘আমাদের ইচ্ছা আমরা প্রতিদিনই খাবার দেয়ার এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। সবার একটু সহযোগিতা পেলে এটা করতে খুব বেশি সমস্যা হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর