বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এখনও বালুর নিচে ৪৬ বাড়ি, ক্ষতিপূরণ চান গৃহহীনরা

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:৩৮

ঘর হারানো আইনাল হোসেন বলেন, ‘শুধু ঘরই না, বালুতে চাপা পড়েছে প্রায় ৫০টি টিউবওয়েল ও কয়েকটি কবরস্থান। আগে থেকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ আমাদের বাড়িঘর চাপা দিয়ে দিল।’

কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর ড্রেজিংয়ের বালুর নিচে চাপা পড়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি ৪৬টি ঘর। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এটিকে দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঘরহারা এসব মানুষের দাবি, এটি দুর্ঘটনা হলেও এর তদন্ত হতে হবে, শাস্তি দিতে হবে জড়িতদের। সেইসঙ্গে ঘরবাড়ি ও আসবাব হারানোয় ভুক্তভোগীদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান।

ঘটনাটি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের বহলা গোবিন্দপুর গ্রামের।

কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুন্দরবন এলাকায় মিঠাপানির সরবরাহ বাড়াতে ২০১৮ সালে ৬২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদীর খনন কাজ শুরু হয়। নদীর বহলা গোবিন্দপুর গ্রামের অংশে এখন সাতটি সিএসডি ড্রেজার কাজ করছে।

নদীর পাশেই কয়েকটি পুকুর ও কাঁচা-আধাপাঁকা বসতবাড়ি আছে। পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, ড্রেজিংয়ের বালু সেসব পুকুর ও আশাপাশে ফেলা হবে, সেটি স্থানীয়দের আগে থেকেই বলা হয়েছিল। সেভাবেই বালু ফেলা হচ্ছিল পুকুরে। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত বালুর বাঁধ গত ১২ এপ্রিল রাতে ভেঙে যায়। তখন চাপা পড়ে যায় পুকুর পাড়ের বাড়িগুলো।

সেদিন থেকেই ঘর হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভাসমান জীবন যাপন করছে। কেউ ছেড়েছেন এলাকা, কেউ আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে, কেউ থাকছেন খোলা আকাশের নিচে। তাদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসতর্কতার জন্য এ ঘটনা ঘটেছে।

বহলা গোবিন্দপুর গ্রামে প্রায় ৬০ বছর ধরে বাস করছেন মো. সুজন। বালুর নিচে চাপা পড়েছে তার বাড়িটিও। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কথা ছিল ড্রেজিংয়ের বালু পাইপে করে পুকুর ভরাটের জন্য নেয়া হবে। কিন্তু সেই বালু সব কিছু ভরে আামাদের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে। কোনো বাড়ির জানালা অব্দি, আবার কোনটির চালা পর্যন্ত বালুর নিচে চলে গেছে।’

ঘরহারা আইনাল হোসেন বলেন, ‘শুধু ঘরই না, বালুতে চাপা পড়েছে প্রায় ৫০টি টিউবওয়েল ও কয়েকটি কবরস্থান। আগে থেকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ আমাদের বাড়িঘর চাপা দিয়ে দিল।’

ভূক্তভোগীরা জানান, এখন খাবার পানি কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে আনতে হচ্ছে। ঘর নেই, খাবার নেই; তারা রোজাও পালন করতে পারছেন না। মিলছে না কোনো সহায়তাও।

চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হাসান রিন্টু বলেন, ‘প্রথমে বলা হয়েছিল, পুকুরের ওয়াটার লেভেল ধরে বালু ফেলা হবে। এর থেকে উঁচু হলেই আমরা নিষেধ করি। এরপর তারা (পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদার) বলেন, বেড়িবাঁধ দিয়ে তারপর ফেলা হবে যাতে মানুষের ঘরবাড়ির ক্ষতি না হয়। কিন্তু রাতের আঁধারে বালু ফেলে এই অবস্থা করা হয়েছে।

‘এরপর আমি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি। তারপরও বালুর উচ্চতা বাড়িয়েই গেছে তারা। ৪৬টি পরিবারের সবার জন্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

এ বিষয়ে এই প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, স্থানীয় ভাবে বিষয়টি ফয়সালা করা হয়েছে। ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান মেম্বারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির তত্বাবধানে এখন বালু ফেলা হচ্ছে, যাতে কারো কোনো ক্ষতি না হয়।

তিনি বলেন, ‘যাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাদের জন্য স্থানীয় ঠিকাদারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়া হয়েছে যেন ক্ষতি পুষিয়ে দেয়।’

বালু চাপা পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি দুর্ঘটনা। ড্রেজিংয়ের বালু খুব স্পিডে পড়ে। গাইড বাঁধ ভেঙে বালু ঢুকে পড়ে। পুরো জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এখানে পুকুর ছিল। আমরা এক সময় মাছ চাষের জন্য লিজও দিতাম। তিন বছর আগে থেকেই আমরা লিজ বন্ধ করে দিই এবং জানিয়ে আসছি এই জায়গা ড্রেজিংয়ের বালু ফেলে ভরাট করা হবে। নদী পাড়ে পুকুর বা গর্ত থাকলে সেখান থেকে পানি ঢুকে পাড়ে ভাঙন দেখা যায়। সে কারণেও এগুলো ভরাট করা জরুরি।’

মনিরুজ্জামান বলেন, লকডাউনের আগের দিন হওয়ায় আমরা সেখানে যেতে পারি নাই। তাই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (এসডিই) আলী আফরোজ জানালেন, বোর্ডের আদেশে এই বিষয়টি সমাধানে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল রানাকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিতে আছেন সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন বিশ্বাস ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন।

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে দুইদিন ড্রেজিং বন্ধ ছিল। তাই এই কমিটি করে ১৬ এপ্রিল থেকে ড্রেজিং চালু করা হয়েছে। কমিটি করার মূল উদ্দেশ্যই ছিল কাজ চালু রাখা। তারপরও কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে অফিসিয়াল পর্যায়ে আলোচনা করে উদ্যোগ নেয়া হবে। আর স্থানীয়দের পুনর্বাসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা যেখানে ছিল সেখানেই বসবাস করতে পারবেন।’

কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোহেল রানা বলেন, ‘যারা যেখানেই আছেন তারা সেখানে বালুর ওপর ঘর করে থাকবেন। নতুন করে ঘর তুলতে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয়রা সহায়তা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই মোতাবেক আমরা কাজ করছি। এরইমধ্যে অনেকে কমিটির সহায়তায় ঘর তুলতে শুরু করেছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর