বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১০ মাসে পাঁচ হাজার বাল্যবিবাহ

  •    
  • ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ১৭:০৭

সাতক্ষীরা সদরের কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিভাবকরা বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরে পড়া মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন। গত এক বছরে প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুলের গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

করোনাকালে সাতক্ষীরায় বাল্যবিবাহ বাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অভিভাবকরা মেয়েদের গোপনে বিয়ে দিচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে মেয়েশিশুরা।

সাতক্ষীরা সদরের কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিভাবকরা বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরে পড়া মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন। গত এক বছরে প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুলের গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মাদ্রাসায়ও একই চিত্র।

এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ ও জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে বাল্যবিবাহের এ ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে এসেছে বলে জানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। বিয়ে হয়ে যাওয়া এসব শিশু শিক্ষার্থীর অধিকাংশই অবস্থান করছে শ্বশুরবাড়িতে। যে কারণে অনেকেরই এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করা হয়নি। একই কারণে জেএসসির নিবন্ধনও করেনি অনেকেই। এর ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের।

এদিকে জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সাকিবুর রহমান বাবলা জানান, গত ১০ মাসে সাতক্ষীরায় ৮৬টি বাল্যবিবাহ আটকানো গেছে। তবে এ সময় জেলায় বাল্যবিবাহেরর শিকার হয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক মেয়েশিশু।

‘গত চার বছরে এক হাজার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে। একটিতেও স্থানীয় প্রতিনিধিরা যাননি। করোনাকালে অনেক বাল্যবিবাহের খবর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়েছি। কিন্তু বিয়ে থামাতে কেউ যাননি।’

জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার সাত উপজেলায় ২০২০ সালের জুলাই মাসে ১২টি, আগস্ট মাসে ৭টি, সেপ্টেম্বর মাসে ১৪টি, অক্টোবর মাসে ৭টি, নভেম্বর মাসে ৮টি, ডিসেম্বর মাসে ৫টি এবং এ বছরের জানুয়ারি মাসে ৯টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ১১টি, মার্চ মাসে ৮টি, চলতি এপ্রিল মাসে ৫টিসহ মোট ৮৬ কিশোরীকে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি। এসব কিশোরীর বেশির ভাগ সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা।

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম শফিউল আযম জানান, ‘সারা বিশ্বে যখন কমছে তখন এ জেলায় দিন দিন বাল্যবিবাহ বাড়ছে। যার প্রধান কারণ হচ্ছে করোনাভাইরাস ও পারিবারিক অসচেতনতা। বাল্যবিবাহ বন্ধে আমরা তৎপর। এই লক্ষ্যে সরকার বাল্যবিবাহে জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জেলায় কোথাও বাল্যবিবাহ হলে ৯৯৯ বা ১০৯ নম্বরে ফোন দিলে বাল্যবিবাহ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তা ছাড়া মহিলা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় স্কুল-মাদ্রাসা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে।’

বাল্যবিবাহ রোধে নানা উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইমাম, কাজী, পুরোহিতদের প্রশিক্ষণ, জনপ্রতিনিধি ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক, সাধারণ মানুষকে নিয়ে বৈঠক, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধী কনসার্টসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে প্রশাসন। আর শেষ পর্যায়ে বাল্যবিবাহ দিলে আইনের মাধ্যমে শাস্তি পেতে হবে বলে সতর্ক করেছি।

এ ব্যাপারে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, করোনার কারণে অনেক মানুষ দরিদ্র হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে শত শত কিশোরীকে বাল্যবিবাহের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত বলেন, ২০ বছরের আগে সন্তান ধারণ করলে গর্ভজাত সন্তান ও মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। অপুষ্টিজনিত সমস্যাসহ মৃত্যুঝুঁকিও রয়ে যায়। পরবর্তী প্রজন্মকে সুস্থ পেতে বাল্য বিবাহ রুখে দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

এ বিভাগের আরো খবর