বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পানিতে মলের জীবাণু ই-কোলাই

  •    
  • ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:১৮

বরগুনায় করোনার চেয়েও বড় মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া। আইইডিসিআরের এক গবেষণা সমীক্ষায় এলাকার খালের পানিতে মলের জীবাণু ই-কোলাইয়ের অস্তিত্ব পেয়েছে। এলাকার বেশির ভাগ লোক গৃহস্থালিকাজে খালের পানি ব্যবহার করে।

খালের পানিতে মলের জীবাণু ই-কোলাই। আর এলাকার বেশির ভাগ লোক নানান কাজে খালের পানি ব্যবহার করেন। বরগুনা জেলায় ডায়রিয়া মহামারি আকারে দেখা দেয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে এ তথ্য পেয়েছে গবেষক দল।

ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতির কারণ অনুসন্ধানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল বরগুনায় চালিয়েছে এ গবেষণা।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল ১ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তালিকা ধরে সমীক্ষা চালায়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, জেলার ৯৪ শতাংশ লোক গভীর নলকূপের পানি পান করলেও ৭১ শতাংশ মানুষ দৈনন্দিন গৃহস্থালিকাজে খালের পানি ব্যবহার করে। সমীক্ষাভুক্ত এলাকায় মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িতে গভীর নলকূপ আছে।

প্রতিষ্ঠানটি বরগুনার খালের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবে পরীক্ষা করে খালের পানিতে মলের জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে। ২০ জন রোগীর মল পরীক্ষায় ৩ জনের মলে কলেরা ও ই-কোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বরগুনার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ১৭০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৯ জন। প্রতিদিন নতুন করে সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসছে রোগীরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো আইইডিসিআরের ওই প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে খাওয়া ও গৃহস্থালিকাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো, খাল-নদীর পানি ফুটিয়ে অথবা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে নিরাপদ করে ব্যবহার করা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া।

আইইডিসিআরের প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি।’

এদিকে, ডায়রিয়ার অবনতি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআর আরেকটি প্রতিনিধিদল বরগুনায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় মাসব্যাপী আইইডিসিআরের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করে।

দলটি জেলার সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকা ঘুরে রোগীদের মল, বিভিন্ন উৎসের পানির নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়েছে। আইইডিসিআরের তিনজন রোগতত্ত্ববিদ (চিকিৎসক) ও তিনজন কারিগরি সহায়ক এই দলে আছেন।

এ দলের নেতৃত্ব দানকারী রোগতত্ত্বববিদ জাহিদুর রহমান জানান, প্রতিবছরই এই মৌসুমে বিভাগে কমবেশি ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। কিন্তু এবার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য তারা বরগুনায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তারা স্বাস্থ্য বিভাগ, আক্রান্ত ব্যক্তি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন। একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের নানা বিষয় সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন।

প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে যা বোঝা যায়, তাতে এ অঞ্চলের মানুষের একটি নেতিবাচক প্রবণতা হলো দৈনন্দিন কাজে খালের পানি ব্যবহার করা। বিশেষ করে সকালে ভাতের সঙ্গে খালের পানি মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে। এই অভ্যাস বদলাতে হবে। গৃহস্থালিসহ সব কাজে নলকূপের পানি ব্যবহার করতে হবে।

প্রতিনিধিদলের সদস্য রোগতত্ত্ববিদ সুব্রত মালাকার বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘আমরা কেবল কাজ শুরু করেছি। নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে, ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ।’

জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা হাসপাতালগুলো ভরে গেছে ডায়রিয়া রোগীতে। রোগীর আধিক্যের কারণে দেখা দিয়ে ওষুধ সংকট। বরগুনা সদর হাসপাতালের ভান্ডাররক্ষক (স্টোর কিপার) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রোগীর চাপে সব ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আত্রান্ত রোগীদের জন্য কোনো ওষুধ এখন আর মজুত নেই। তাই বিভিন্ন দপ্তর ও মানুষের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে আমরা হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা চালাচ্ছি।’

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ভান্ডাররক্ষক (স্টোর কিপার) মো. আমিনুর রহমান বলেন, বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ করোনার চেয়েও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালসহ কয়েকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়রিয়া রোগীদের জন্য মজুত ওষুধ ফুরিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল বরগুনায় ১ হাজার মিলিলিটারের সাড়ে ৩ হাজার ও ৫০০ মিলি লিটারের ৪ হাজার ব্যাগ স্যালাইন বরাদ্দ এসেছে। বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজে যোগাযোগ করে এই স্যালাইনের বরাদ্দ এনেছেন। তাই সেই স্যালাইন তার সংসদীয় আসনের বামনা, বেতাগী ও পাথরঘাটা উপজেলা হাসপাতালে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে বরগুনা জেলার জন্য ৫ হাজার মিলিলিটার স্যালাইন বরাদ্দ দেয়া হবে বলে শুনেছি। তা এখন পর্যন্ত নিশ্চত হতে পারিনি।’

এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর কারণে জেলার হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে তিল ধরার জায়গা নেই। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এ বিভাগের আরো খবর