বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্যার শঙ্কা: হাওরের ধান কাটতে ব্যস্ততা কৃষকের

  •    
  • ২১ এপ্রিল, ২০২১ ১৩:১৫

কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘প্রায় ১০ একরের ধান কাটা অইয়া পড়ছে। শ্রমিক, কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়া ধান কাটছি। আশা করতাছি আর সাত দিনের মধ্যে পুরা ধান কাইট্যে শেষ করবাম।’

চলতি বোরো মৌসুমে হাওরে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়নি। তবে আগাম বন্যার আশঙ্কায় পাকতে থাকা ধান কাটায় ব্যস্ততা দেখা গেছে কৃষকদের মধ্যে।

সম্ভাব্য দুর্যোগ এড়িয়ে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের ৮০ শতাংশ এবং ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পুরো বোরো ধান কাটার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

নেত্রকোণার হাওরে এবার ৪০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে, যার অধিকাংশ পেকে গেছে। সেই ধান কাটতে এখন মাঠজুড়ে ব্যস্ততা কৃষকদের।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, ২৫ এপ্রিল নাগাদ হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার শঙ্কা রয়েছে। ভারতের মেঘালয় ও আসামের বরাক অববাহিকাসহ চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর প্রভাবে আগাম বন্যা হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আজ নাগাদ নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে এই পানির অবস্থান নদীর অনেক নিচেই রয়েছে। হাওরে ৩০০ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধের মধ্যে ১৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০১ দশমিক ২ কিলোমিটার ঝুকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে।

‘আগাম বন্যা হলেও কৃষকের ফসলহানির শঙ্কা নেই। তবুও যত দ্রুত সম্ভব ধান কেটে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে আমরা জানিয়েছি।’

মোহন লাল বলেন, ‘কৃষকদের দ্রুত ধান কাটা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান ও আমি হাওরে গিয়ে সোমবার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

ফসল নিয়ে সম্ভাব্য দুর্যোগের শঙ্কায় থাকা হাওরাঞ্চলের খালিয়াজুরীর পুরানহাটির কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, তিনি ১৬ একর জমিতে এবার বোরো আবাদ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০ একরের ধান কাটা অইয়া পড়ছে। শ্রমিক, কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়া ধান কাটছি। আশা করতাছি আর সাত দিনের মধ্যে পুরা ধান কাইট্যে শেষ করবাম।’

একই এলাকার কৃষক মনির হোসেন ধান চাষ করেছেন ৪০ একর জমিতে। এর মধ্যে ২০ একরের মতো জমির ফসল কাটা হয়েছে।

মনির বলেন, ‘আরও ৮-৯ দিন লাগব আমার সব ধান কাটা শেষ করতে। মাঠে ধান পাকছে। কাইট্যে আনার পরে ধান মাড়াই কইরা শুকানোর জাগা লাগে।

‘কিছু কাটছি আর মাড়াই, শুকানির পরে অন্য ধানগুলা কাইট্যে আনতাছি।’

খালিয়াজুরী উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক রহিম আলী ৮ একর জমিতে আগাম জাতের ব্রি ২৮ ধানের আবাদ করেছিলেন। তিনি তিন দিন আগেই পুরো ধান কেটে ঘরে তুলেছেন।

রহিম বলেন, ‘কিছু ভিজা ধান বেচছি ৭০০ থেকে ৮০০ ট্যাহা মণ দরে। এইবার ভালাই ধান হইছে। ব্রি ২৮ একরে ৬০-৬৫ মণ হইছে।

‘আবহাওয়া ভালা আছিল। দরকারের সময় বৃষ্টি হইছে। সারও আছিল।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, নেত্রকোণায় সমতল, পাহাড়ি এলাকা ও হাওরসহ এবার মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে ৪০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হাওরের ফসল আগাম বন্যাসহ সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে রক্ষায় ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ৮০ শতাংশ ও ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পুরো ফসল কাটার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ধান কাটার এ লক্ষ্য নিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সচেতন করাসহ ধান কাটা তত্ত্বাবধান করছেন। হাওরে ২৬ হাজার শ্রমিক, ১৩৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টারে এবার ধান কাটা হচ্ছে।

হাবিবুর বলেন, ‘মঙ্গলবার পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে ২৮ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে, যা বলা যায় মোট আবাদের ৬৮ শতাংশ। এতে কৃষকরা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টন ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন।’

এই কর্মকর্তা জানান, হাওরে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টন। আর সমতল, পাহাড়ি অঞ্চল মিলিয়ে জেলায় মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬৫ হাজার টন।

এ বিভাগের আরো খবর