‘লকডাউনের কারণে ১৫ দিন থাকি বাড়িত বসি আছি, কাম নাই। সংসার চলা কষ্ট হয়া গেইছে। খবর পাইনো নওগাঁর রানীনগরে ধান কাটা শুরু হইছে, শ্রমিক নিবে... ইউএনও স্যারের সাথে যোগাযোগ করি আইজ যাইছি। ওইঠে ১৫ দিন থাকির পাইলে নিহাইত দশ হাজার টাকা নিয়া আসির পামো।’
কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের নতিবাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম। তার মতো ১৭ জন কৃষিশ্রমিককে ধান কাটার জন্য নওগাঁয় পাঠিয়েছে প্রশাসন।
সদর উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণ থেকে মাইক্রোবাসে করে তারা নওগাঁয় যান।
ওই ১৭ জনের মধ্যে আছেন গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা এলাকার আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘এই রকম করি বসি থাকিলে শ্যাষ হয়া যামো। কাম করি হামাক দিন চলেবার নাগে।
‘ঈদ আইসেছে, ঈদোত টাকা না থাকিলে ছোয়া-ছোটক কিছু দিবার পাবো না। লকডাউনে ধান কাটির যাবার পাইছি এইজন্য ইউএনও স্যারোক ধন্যবাদ দেই।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিশ্রমিক হিসেবে তালিকা পাওয়ার পর আমরা সেগুলো যাচাই করে দেখি তারা শ্রমিক কিনা। নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠিয়ে থাকি।
‘ওই তালিকা অনুযায়ী তাদের নামের অনুকূলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত কপি নিয়ে তারা পৌঁছান কাঙ্ক্ষিত স্থানে।’
কৃষি বিভাগ জানায় নীলফামারী থেকে ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, লক্ষ্মীপুর, নওগাঁ, নোয়াখালী গিয়ে থাকে। গত বছর ২০ হাজার শ্রমিক পাঠানো হয়েছিল।
ইউনিয়ন থেকে তালিকা আসার পর যাচাইবাছাই শেষে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। কোনো শ্রমিকের যদি করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ না পাওয়া যায় তাহলে তাকে কাজে পাঠানো হয়।
এ ক্ষেত্রে রুট পারমিট কিংবা সড়কে যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থা করে দেয়া হয় উপজেলা থেকে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এলিনা আকতার জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কৃষিশ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে কৃষি ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
ইউএনও জানান, ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে কৃষিশ্রমিক পাঠানো। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ শ্রমিক পাঠানো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, স্বাভাবিকভাবে দক্ষিণের জেলাগুলোয় ধান কাটার জন্য কৃষিশ্রমিকরা গিয়ে থাকেন। গতবারও কোভিডের কারণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শ্রমিক পাঠানো হয়েছিল।