বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাতের আঁধারে রাজধানী ছাড়ছে শ্রমজীবীরা

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ২১:৫৯

শ্রমজীবী এসব মানুষ জানান,গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন রুটি-রুজির আশায়। কিন্তু এখানেও কাজ মিলছে না। তাই পরিবারের কাছেই ফিরে যাচ্ছেন তারা।

করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ দেয়ার আগে রাজধানীতে কাজ করতে এসে এখন বাড়ি ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন জেলার শ্রমজীবীরা।

বর্তমানে কাজ না থাকা, থাকা-খাওয়া সংকটের কারণে উপায় না পেয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন অনেকে।

শ্রমজীবী এসব মানুষ জানান,গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন রুটি-রুজির আশায়। কিন্তু এখানেও কাজ মিলছে না। তাই পরিবারের কাছেই ফিরে যাচ্ছেন তারা।

রোববার রাত সাড়ে ১১টা। সাভার এলাকার মূল সড়কের ধারে শত মানুষের ভিড়। মোটরবাইক থামিয়ে রাস্তার ধারে ভিড়ের কারণ জানতে চাইলে উত্তর আসে তারা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। ঢাকা শহরে টিকতে পারছেন না তাই বাড়ি যাবেন সবাই।

তাদের মধ্যে শাহ আলম নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। এলাকায় কাজ নেই। বউ, পোলাপানসহ সাত জনের সংসার। খাওয়ার টাকা তো লাগবো। আবার সামনে ঈদ। তাই পেটের দায়ে লকডাউনের আগের দিন ঢাকার গাবতলীতে আইছিলাম ধান কাটতে। ‘ছয় দিন কাজ হইছে। তিন হাজার টাকা পাইছি। এ কয়দিন খেয়েদেয়ে ইনকামের অর্ধেক টাকা শেষ। ঘুমায়ছি রাস্তার ধারে। এহন যে টাকাগুলা আছে তাতে আর দুই দিন থাকলে তাও শেষ হয়ে যাব। পোলাপানের জন্য পাঠাব কী? তাই মরিবাঁচি কাছের দেড়টা হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।

করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে চলছে ‘কঠোর লকডাউন’। বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ আছে জরুরি সেবা ও শিল্পকারখানা ছাড়া সবকিছু। এতে বিশেষত দিনমজুর মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এদের সহায়তার জন্য ৫৭২ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

গত ৮ এপ্রিল এক তথ্যবিবরণীতে এই বরাদ্দের কথা জানানো হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের এই অর্থ দেশের ১ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে ওই বিবরণীতে বলা হয়েছে।

তবে সরকারের বরাদ্দের এই অর্থ বেশিরভাগ কর্মহীনদের হাতেই পৌঁছায়নি। গেল বৃহস্পতিবার বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কর্মহীনদের মধ্যে সরকারি অর্থ বরাদ্দ বা বিতরণ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনও পাইনি। বরাদ্দ এলে তা যত দ্রুত সম্ভব বিতরণ করা হবে।’

একই তথ্য জানিয়েছিলেন রংপুরের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান।

তিনি জানান, কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় লকডাউন চলাকালে কর্মহীনদের মধ্যে বিতরণের জন্য কোনো বরাদ্দ এখন পর্যন্ত পাননি তিনি।

সাভারে যারা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাদের একজন ধান কাটা শ্রমিক সাখাওয়াত আলীও। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা শহরে আমরা কেমনে থাকবো? আমাদের জন্য ঢাকা শহর না। থাকার জায়গা নাই। খাওনের ঠিকঠিকানা নাই। পুলিশে দৌড়ানি দেয়। কাজ নাই এখন বাড়ি যাওয়া লাগবে। বাড়ি থেকে আসার সময় সবজির ট্রাকে করে আসছিলাম। এখন বাস চলে না।

‘এ কয়দিন কাজ করে কোনো রকম চাল কেনা টাকা জোগাড় হয়েছে। গাবতলী থেকে ট্রাকে উঠতে চাইলাম কিন্তু পুলিশের ভয়ে ট্রাকওয়ালারা নেয় না। না পেয়ে হাটা ধরছি। দুই দিন লাগলেও বাড়ি যামু। না হলে ছেলে মেয়ে না খেয়ে মরব।’

আরেকজন বিল্লাহ হোসেন। তিনি বলেন,‘মোবাইল করে বাড়িত শুনলাম সরকার থেকে কোনো চালডাল পায়নি। আমাদের দিকে কেউ তাকায় না। এলাকায় রিকশা চালাতাম সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকাতে এসে কদিন কাজকাম করে যা টাকা পাইলাম লকডাউনে পড়ে তাও প্রায় শেষ। আমরা তো খাবার জোগাড়ের জন্য আসছি। সরকার বুঝবো না? এখন কী হাতে বাড়ি ফিরব।’

ভিজিএফ কর্মসূচির বাইরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়া নিম্নআয়ের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম রোববার সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসকে জানিয়েছেন, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো পাবে আড়াই হাজার টাকা করে আর কৃষক পরিবার পাবে পাঁচ হাজার টাকা। তবে কবে নাগাদ এই সহায়তা দেয়া হবে তা জানা যায়নি।

করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আগেও দাঁড়িয়েছে সরকার। গত বছর ক্ষতিগ্রস্ত প্রাায় ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর