বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘এখন আমাকে দেকবি কে?’

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ২১:১৩

বড় বোন লাইলী খাতুন বলেন, ‘অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে ৯ মাস আগে আমার ভাই রনি চাকরি করতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে যায়। আজ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের শাস্তির চাই। তার মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ চাই।’

ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারের ছেলে রাকিব হাসান রনির বয়স হয়েছিল মাত্র ২২ বছর। কিন্তু এই অল্প বয়সেই পুলিশের গুলিতে তাকে প্রাণ হারাতে হলো।

১৭ এপ্রিল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এলাকায় কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে শ্রমিক-পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৫ জন নিহত এবং অন্তত ১২ জন আহত হন।

নিহত ব্যক্তিদের একজন হচ্ছেন রনি। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মিনহাজপুর গ্রামে।

স্থানীয় লোকজন ও রনির পরিবার সূত্রে জানা যায়, মা-বাবা ও ভাই-বোনকে নিয়ে রনি থাকতেন টিনের ছাউনি দেয়া একটি ছোট ঘরে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট।

বাবা মোহাম্মদ ওলিউল্লাহ একজন বর্গাচাষী। কোনোরকমে চলে তাদের সংসার। মেজো ভাই ইসমাইল বাবু গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। দুই বছর আগে মেজো ভাই ইসমাইল বাবুকে কাজের জন্য সৌদি আরব পাঠান বাবা। কিন্তু সেখানে ভাল কাজ না পাওয়ায় খুব কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে বাবুকে।

বড় বোন লাইলী খাতুন এইচএসসি পাশের পর তার বিয়ে দেয়া হয়। যৌতুক দিতে না পারায় তাকে তালাক দেয় তার স্বামী। এখন তিনি বাবার বাড়িতেই থাকেন। এমন অবস্থায় মা গোলনাহার বেগমেরও চিন্তার শেষ ছিলনা।

টগবগে যুবক রনির মেধা থাকলেও খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি। এলাকার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। তাকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে দারিদ্র্য। খুব অল্প বয়সে নেন অভাবের সংসারের দায়িত্ব।

৯ মাস আগে রনি কাজ করতে যান চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এলাকার কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে। ওই গ্রামের অনেকেই ভাগ্য বদলের জন্য ওই কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে চাকরি করেন। তাদের দেখাদেখি দরিদ্র বাবার কষ্ট লাঘব করতেই ওই কোম্পানিতে চাকরি নেন রনি। চাকরি নেয়ার পর খুব ভালোভাবেই চলছিল তাদের সংসার।

এরই মধ্যে ১৭ এপ্রিল শনিবার ঘটে ওই সহিংসতা। ওই দিন দুপুরে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ওই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ গুলি ছুঁড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজন নিহত হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রনি।

রোববার রাত ২টার দিকে তার মরদেহ নেয়া হয় নিজ গ্রাম মিনহাজপুরে। নিহতের মরদেহ দেখতে ছুটে আসেন গ্রামের শত শত নারী পুরুষ। এ সময় স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার বাতাস। রনির মৃত্যুতে তার পরিবারে চলছে মাতম।

রনির পরিবার ও স্বজনদের আহাজারি

সোমবার সকাল ৮টার দিকে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে রনির মরদেহ দাফন করা হয়।

রনির মা গোলনাহার বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার এক ছেলি বিদেশ থাকে। রনি আমাকে দেকাশুনা করতু। এখন আমাকে দেকবি কে? রনি এক সপ্তাহ আগে রাতি আমার সাথে মোবাইলে কতা বলিচে। তার এই রিদের ছুটিতে বাড়ি আসার কতা ছিল। আসলু কিন্তু লাশ হয়ি।’

বাবা মোহাম্মদ ওলিউল্লাহ বলেন, ‘আমার মাটে কোনো জমি নেই। মাত্র ২ কাটা ভিটি জমি আচে। পরের জমি বর্গা নিয়ি চাষ করি খাই। দুই ছেলি সংসারের হাল ধরলিও ছোট ছেলি রনি বেশি টেকা দিতু। সে মরি যাওয়াতে আমরা অসহায় হয়ি পড়িচি। কোম্পানি থেকি ক্ষতিপূরণের দাবি করচি।’

বড় বোন লাইলী খাতুন বলেন, ‘অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে ৯ মাস আগে আমার ভাই রনি চাকরি করতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে যায়। আজ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের শাস্তির চাই। তার মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ চাই।’

গ্রামের প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রনি খুব শান্ত ও ভদ্র ছেলে ছিল। সে অন্যদের থেকে অনেক আলাদা ছিল। আমরা চাই রনির পরিবারকে কোম্পানি ও সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক।’

এ বিভাগের আরো খবর