যে বয়সে পড়ালেখা করা আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় দিন কেটে যাওয়ার কথা, ঠিক সেই বয়সে ঘরের ভেতরে বন্দি শেখ শাওন মুন্না। বিছানায় শুয়ে বসে কাটছে তার দিন। দুরারোগ্য ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ১৮ বছরের এই তরুণ।
গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তারাশী গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর আব্দুল হালিম শেখের ছেলে শেখ শাওন মুন্না। মা-বাবা ও ছোট দুই বোন নিয়ে তার পরিবার।
মুন্নার ছোট বোন মারিয়া তারাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ও আরেক বোন মরিয়মের বয়স ৪ বছর। অভাব আর অনটন তাদের নিত্যসঙ্গী। মুন্না কোটালীপাড়ার পাবলিক ইনস্টিটিউশনের (মডেল) এসএসসি পরীক্ষার্থী। ইতিমধ্যে পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন তিনি।
মুন্না স্বপ্ন দেখতেন লেখাপড়া শিখে একদিন মা-বাবার এই অভাবের সংসারটা হাসি-আনন্দে ভরিয়ে দেবেন। মা-বাবারও অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে। সব স্বপ্নগুলো ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে এই মরণব্যাধি ব্রেন টিউমার।
স্বজনরা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে একটি দুর্ঘটনায় মুন্নার মাথা ফেটে গুরুতর জখম হয়। ওই সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা কয়েক দফা অস্ত্রোপচার এবং প্রায় ৬ মাস চিকিৎসা সেবা দিয়ে মোটামুটি সুস্থ করে তোলেন মুন্নাকে। পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় ও ধারদেনা করে ওই সময় তার চিকিৎসার খরচ জোগায় তার পরিবার। যার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মুন্নার দরিদ্র বাবা।
এরই মধ্যে গত ২০ মার্চ হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দ্রুত কোটালীপাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে স্থানীয় চিকিৎসক ঢাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে বলেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক জিল্লুর রহমানের কাছে তাকে নেয়া হয়। তিনি এম আর আই, সিটি এনজিওগ্রাম, সিটি স্ক্যানসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, মুন্নার ব্রেন টিউমার হয়েছে এবং অতি দ্রুত অস্ত্রোপচার করাতে হবে।
বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করলে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। আর সরকারি হাসপাতালে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু কোথা থেকে জোগাড় হবে এই টাকা? এই চিন্তায় পাগলপ্রায় মুন্নার মা সাবিনা বেগম ও বাবা হালিম শেখ। সন্তানের চিকিৎসায় তার মা-বাবা সমাজের সব স্তরের সহৃদয়বান মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুন্না
এদিকে, মুন্নার চিকিৎসায় সবার সহযোগিতা চেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে কোটালীপাড়ার অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জ্ঞানের আলো পাঠাগার। গঠন করা হয়েছে ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার মুন্না চিকিৎসা তহবিল’।
মুন্নার বাবা দিনমজুর হালিম শেখ বলেন, ‘ধারদেনা করে আর সহায়-সম্বল যা ছিল তাই বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। অস্ত্রোপচার করাতে অন্তত ৮ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। সমাজের বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে আমার ছেলে বাঁচতে পারবে। আমি সমাজের সকলের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই।’
কোটালীপাড়ার পাবলিক ইনস্টিটিউশনের (মডেল) প্রধান শিক্ষক সুরেশ দাস বলেন, ‘মুন্না আমার বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। সে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা দিনমজুর হওয়ায় আমরা বিদ্যালয়ে বিনা পয়সায় পড়ার সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু এখন তার ব্রেনে টিউমার হয়েছে। এ জন্য অপারেশন করা প্রয়োজন। অপারেশন করতে প্রায় ৮ লাখ টাকা দরকার। কিন্তু তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এতে টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। যদি সমাজের বিত্তবানরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে অপারেশন করা সম্ভব হবে। একটি নতুন জীবন পাবে মুন্না।’
জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সভাপতি সুশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। আসুন দরিদ্র এই মেধাবী ছাত্রকে বাঁচাতে আমরা সবাই এগিয়ে আসি। সকলের সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা পেলে মুন্নার চিকিৎসা করানো সম্ভব। যে যা পারেন তাই দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ জানাই।’
চিকিৎসায় আর্থিক সহযোগিতা পাঠাতে পারেন নিচের যেকোনো মাধ্যমে। বিকাশ: ০১৯৮৫-৬২৭ ৬৯০, রকেট ও নগদ: ০১৩১২-৫০৪৬৯২, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: আব্দুল হালিম সেখ, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ০০০৩৫৩৪০০৩২৬৩, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, কোটালীপাড়া শাখা, গোপালগঞ্জ।