লকডাউনের মধ্যে ঢাকায় কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্যায় আচরণ ও জরিমানার পর এবার ফেনীতে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির সমালোচনা হচ্ছে। যদিও পুলিশের দাবি, তারা আত্মরক্ষা করেছে কেবল।
রোববার বিকেলে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের মডেল হাই স্কুলের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
রিকশায় করে যাওয়া শহিদুল ইসলাম নামে ওই যুবককে টেনে হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে চড় থাপ্পড়, লাথি দেয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরে শহিদুল নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অসংলগ্ন আচরণ করছেন। এর মধ্যে তিনি রিকশায় করে বাইরে এসেছিলেন।
৩ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, মাস্ক ছাড়াই রিকশায় করে উকিলপাড়া থেকে ট্রাংক রোডের দিকে যাচ্ছিলেন শহিদুল। মডেল স্কুলের সামনে মডেল থানার দায়িত্বরত এসআই যশোমন্ত মজুমদারসহ পুলিশ সদস্যরা তার রিকশার গতিরোধ করে।
এ সময় ক্ষেপে যান শহিদুল। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘অন্য রিকশা ছেড়ে দিছস। আমার রিকশা কেন ধরা হয়েছে।’
সেখানে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্য এ সময় সেই রিকশাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের একজন শহিদুলের গলায় ধরে তাকে টেনে নামান। অন্য কয়েকজন এসে তার হাত ও কলার ধরেন।
এ সময় কয়েকটি চড় দেয়া হয় যুবককে। একজন লাথিও মারেন। শহিদুলও সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের দলগত শক্তির সঙ্গে পেরে উঠেননি।
এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য বলতে থাকেন, ‘ওই হাতকড়া পরা, হারকড়া পরা’।
তখনও চলতে থাকে ধস্তাধস্তি। তখন ওই যুবক বারবার বলতে থাকেন, ‘এ দেশ পুলিশের দেশ।’
শহিদুলের প্রতিরোধের মুখে হাতকড়া লাগাতে না পেরে এক পুলিশ সদস্য তাকে পিছমোড়া ধরে রাস্তায় চেপে ধরেন।
তখন সড়কের আশপাশে থাকা লোকজন উচ্চস্বরে হইচই করতে থাকে। এর মধ্যে হাতকড়া পরানো হয় শহিদুলকে। এই অবস্থাতেই সেই যুবক পুলিশকে কিল-ঘুষি দেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন।
এরপর সেখান থেকে শহিদুলকে টেনে টেনে নেয়া হয় থানায়।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর হায়দার এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন সেই যুবককে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থানায় নেয়ার পর জানা গেছে ওই যুবক কিছুদিন পরপর ভাইরাল হতে চায়। ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না মর্মে মুচলকো দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
ফেনীর পুলিশর সুপার খোন্দকার নূরুন্নবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। পুলিশ কর্তব্য পালনকালে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশের উপর ক্ষেপে যায় এবং মারতে আসে। তখন পুলিশ আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে। তার গায়ে হাত তোলা পুলিশের উদ্দেশ্য নয়।’
গত ১৪ এপ্রিল থেকে চলা লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা বাইরে যেতে চান, তাদেরকে পুলিশের কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে।
মাস্ক না পরলে জরিমানাও করা হচ্ছে বহু জায়গায়।
তবে মুভমেন্ট পাস থাকা বাধ্যতামূলক না হলেও ঢাকায় কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে পুলিশের আপত্তিকর আচরণ ও জরিমানার বিষয়টি নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা চলছে।