মাকে করোনার টিকা দেয়ানোর জন্য সোমবার দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উত্তম কাব্য।
নগরের লামাবাজার মোড়ে যেতেই দেখেন, সড়কের মধ্যে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ ফেলে প্রতিবন্ধকতা দেয়া হয়েছে।
বাঁশের পাশেই পুলিশের অবস্থান। সড়কে চলাচলকারী সব যানবাহনকে আটকে দিচ্ছেন তারা।
উত্তম জানান, টিকা দেয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও পুলিশ মূল সড়ক বাদ দিয়ে গলিপথ দিয়ে যেতে বলে।
ছয়দিন ধরে দেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ চলছে। তবে লকডাউন অমান্য করেই সিলেট নগরে দিন দিন বাড়ছে যানবাহন ও মানুষের চলাচল। এ অবস্থায় সোমবার থেকে নগরের সড়কে বাঁশ ফেলে লকডাউন কার্যকরের উদ্যোগ নেয় পুলিশ।
কেবল লামাবাজার মোড়ই নয়, মহানগর এলাকার ১৪টি সড়কে বাঁশ ফেলে যানবাহন চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার (ট্রাফিক) বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু অনেকেই এ নির্দেশনা না মেনে সড়কে বের হচ্ছেন। লকডাউন কার্যকরের জন্য আজ (সোমবার) ১৪টি মোড়ে বাঁশ ফেলে যানবাহন চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, মদিনা মার্কেট, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, অতিরবাড়ি, শ্রীরামপুর বাইপাস, পারাইর চক, বটেশ্বর, এয়ারপোর্ট রোড, রিকাবীবাজার, লামাবাজার, জিন্দাবাজার ও কাজির বাজার সেতুর দক্ষিণ পাশের সড়কে বাঁশ ফেলে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে বন্দরবাজার ও আম্বরখানা এলাকায় দেখা যায়, সড়কে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। রীতিমতো যানজট লেগে আছে। পুলিশের সঙ্গে চালক ও যাত্রীদের তর্কাতর্কি লেগে যেতেও দেখা যায়।
যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, সড়কে বাঁশ ফেলে রাখার কারণে জরুরি সেবার গাড়ি এবং মুভমেন্ট পাস থাকা অনেকেই যাতায়াত করতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, পুলিশ সরকারি নির্দেশনা পালনে কাজ করছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন, তাদের চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। তবে অনেকেই বিনা কারণে বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। তাদের যেতে দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বাঁশের প্রতিবন্ধকতার পাশেই পুলিশের চেকপোস্ট আছে। এতে যে সব অনুমোদিত গাড়ি রয়েছে তারা যদি পুলিশের কাছে যথাযথভাবে প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে তাদের ছাড়া হচ্ছে। আর অননুমোদিত গাড়িগুলোকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।’
মূল সড়ক এভাবে বন্ধ করে দেয়ায় বিভিন্ন পাড়ার সড়কে দেখা গেছে যানবাহনের ভিড়। গলিগুলোতে মানুষের চলাচলও আগের পাঁচদিনের তুলনায় সোমবার বেড়েছে। রিকশা ও অটোরিকশা চলছে অবাধে। পাড়ার দোকানপাটগুলোও খোলা রয়েছে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, পুলিশ জনগণকে বুঝিয়ে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণ সচেতন না হলে কোনোদিন এই সীমিত জনবল দিয়ে কোটি কোটি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তারপরও দিনরাত জনগণের সেবা করছে পুলিশ।
লকডাউন কার্যকরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে রয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম।