বছর দুয়েক আগে মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হয়ে বের হন মাহমুদুল হাসান রাহাত। তার ইচ্ছা ছিল আপাতত দাখিল শেষ করার।
কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাটা পড়ে লেখাপাড়ায়।
বিষণ্ণ এই সময়ে পরিবারের জন্য কিছু একটা করার চিন্তা করেন রাহাত। ভাবেন কিছু টাকা আয় করতে পারলে জুটবে নিজের হাত খরচও।
পরিচিত তিন জনের সঙ্গে বাঁশখালী যায় ২৪ বছরের ছেলেটি। শ্রমিক হিসেবে যোগ দেয় এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
কিন্তু শনিবার শ্রমিক বিক্ষোভের সময় গুলিতে শেষ হয়ে যায় রাহাতের সব স্বপ্ন। তাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা।
রাহাতের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের সাহেবনগর এলাকায়। চায়ের দোকানি বাবা ফালু মিয়ার পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে রাহাত তৃতীয়।
সোমবার সকালে সাহেবনগর সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তাকে। এর আগে রোববার রাত ১২টার দিকে তার মরদেহ এসে পৌঁছায় নিজ বাড়িতে।
এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিক আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে জানান, তার সঙ্গেই গ্রাম থেকে বাঁশখালী গিয়েছিল রাহাত। বেশ কিছুদিন ধরেই সঠিক সময়ে বেতন দেয়া, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও ইফতারের সময় ছুটি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের ঝামেলা চলছিল।
এ নিয়ে ১৭ এপ্রিল শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে কোম্পানির লোকেরা তাদের বাধা দেয়, গালিগালাজ করে। পরে পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের পেটায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরাও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এ সময় সময় রাহাতের বাম হাতে ও পিঠে গুলি লাগে।
রাহাতের ভাই সারোয়ার আলম মিন্টু জানান, ভাইদের মধ্যে সবার বড় টিটন মিয়া। মিন্টু ঢাকায় হকারি করেন। রাহাতের পরের ভাই সাইমুন কলেজে পড়ে। সবার ছোট ভাই দুর্জয় শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে বাড়িতেই থাকে। চার বোনের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি একজন পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে, আরেকজন চতুর্থ শ্রেণিতে।
মিন্টু জানান, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য রাহাত চট্টগ্রাম গিয়েছিল। এক মাসও হলো না নিথর দেহে বাড়ি ফিরল।
রাহাতের বাবা ফালু মিয়া জানান, মৃত্যুর তিনদিন আগেও রাহাতের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল তার। জানিয়েছিল প্রথম মাসের বেতন পেয়ে ছোট দুই ভাইয়ের জন্য ঈদের জামাকাপড় কিনবে।
তিনি বলেন, ‘তিনদিন আগেও এই বারের ঈদ নিয়ে কত সুন্দর কথাবার্তা বলল ছেলেটা। কে জানত ঈদের আগেই ছেলের মরা মুখ দেখতে হবে?’
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ফালু মিয়া। ছেলের মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি।