বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লকডাউনে মাছের আড়তে প্রতিদিনই জটলা

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ১০:২৮

বাজারের বাইরে ব্যানার টাঙিয়ে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ করার আহ্বান জানানো আছে। কিন্তু সেটি উল্টে আছে। সেসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না, সেই নজরদারিতে দেখা যায়নি কাউকে। বাজার থেকে কিছু দূরেই আশুলিয়া থানা। লকডাউন চলাকালে এই বাজারে কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে বেশ দূর থেকেও। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের সেখানে টহল দিতে দেখা যায়নি একবারও।

সর্বাত্মক লকডাউনেও জমজমাট সাভারের মাছের আড়ত। ভোরের আলো ফোটার আগেই সেখানে জড়ো হতে থাকে লোকজন। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত থাকে জটলা।

গাদাগাদি করে মাছ বেচাকেনায় ব্যস্ত মানুষের মধ্যে নেই করোনার ভয়। কারও কারও মুখে কদাচিৎ দেখা যায় মাস্ক, যা নামানো থাকে থুতনিতে। কারও মাস্কটি থাকে হাতে কিংবা পকেটে। স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা ওই পর্যন্তই।

কঠোর লকডাউন শুরুর দিন থেকেই নিউজবাংলার প্রতিবেদক নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক-ঘেঁষা আশুলিয়া থানা মৎস্য ব্যবসায়ী মার্কেট ঘুরেছেন। প্রতিদিন সকালেই সেখানে দেখা গেছে জটলা। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এখানে আসেন। কেনাবেচা চলে দেদার।

লকডাউনের মধ্যে এমন সমাগমে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা যে আছে, বাজার কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে উদাসীন। তাদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আড়ত চালানোর ব্যাপারে তারা সজাগ রয়েছেন। বাজারের বাইরে ব্যানার টাঙিয়ে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ করার আহ্বান জানানো আছে।

কিন্তু রোববার গিয়ে দেখা গেল, সেটি উল্টে আছে। ব্যানার থাকলেও নির্দেশনাগুলো মানা হচ্ছে কি না, সেই নজরদারিতে দেখা যায়নি কাউকে। বাজার থেকে কিছু দূরেই আশুলিয়া থানা। লকডাউন চলাকালে এই বাজারে কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে বেশ দূর থেকেও। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের সেখানে টহল দিতে দেখা যায়নি একবারও। উপজেলা প্রশাসনেরও নেই নজরদারি।

বাজারে মাছ বিক্রি করতে এসেছেন হাজি শাহাদাত হোসেন। করোনার মধ্যেও কেন এই ভিড়ভাট্টায় এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মাছ বিক্রি হয়। আগের থাইকা পাইকার অনেক কম। যারা আশপাশের পাইকার এরাই শুধু আসতেছে। দূরের পাইকার আসতে পারতাছে না।’

মাস্ক কেন পরেন নাই, এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমি মাস্ক খুলে রাখছি এ জন্য যে আমি কথা বললে দূরের থেকে শুনতে পারে না। মাস্ক হাতে ছিল। লোকজন নাই, ফাঁকা, তাই খুলে রাখছি।’যদিও সে মূহুর্তই তার আশপাশে ছিল অন্তত অর্ধশত মানুষ।

আড়তের আরেক মাস্কহীন বিক্রেতা সাংবাদিক পরিচয় শুনে নাম জানাতে চাননি। তিনি বলেন, ‘মাছটা নামাইছি তো, সাজাইতেছি। মাস্ক পকেটে আছে তো। মাছের পানি ছিইট্টা আহে দেইখা ময়লা মাইখা যায়। মাছের পানি ছিটে প্রচুর। এর জন্য খুইলা রাখছি।’

করোনার ভয়াবহতার বিষয়ে বোঝানোর পর দ্রুত মুখে মাস্ক লাগিয়ে বলেন, ‘আমারই ক্ষতি হয়। সমস্যা আমারই এইডা। অজুহাত দেয়াটা ঠিক হয় নাই।’

অনেক মানুষের মাঝে বসে মাস্ক না পরে টাকা গুনছিলেন দেলোয়ার হোসেন নামে আরেক আড়তদার। মাস্কের বিষয়ে জানতে চাইলে দ্রুত টেবিলের ওপর পড়ে থাকা সুতাবিহীন ছেঁড়া একটি মাস্ক দেখিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘আরে ভাই ট্যাকা গুনতাছি। মাস্ক তো এহানে থুইছি বোঝেন না ক্যা আপনে? আরে বাবা আমার আড়ত এহানে আমি মাস্কটা এহানে খুলায় রাখছি বুঝেন না কেন? আমার মাস্ক এই যে দ্যাহেন না ছিঁড়া গ্যাছে। হপায় রাখছি আর ছিঁড়া গ্যাছে। আমি ট্যাকা নিতে গেছিলাম।’

এভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কেন বাজার চালানো হচ্ছে, তা জানতে চাওয়া হয় আশুলিয়া থানা মৎস্য ব্যবসায়ী মার্কেটের ম্যানেজার মোহাম্মদ আল আমিনের কাছে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যবিধিটার ব্যাপারে আমরা খুব সজাগ আছি। সবাইরে সচেতন করতাছি। কিন্তু দেখা যায় কিছু অসচেতন লোক থেকেই যায়, যাদের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও যতটুকু সম্ভব আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চেষ্টা করতাছি কেনাবেচা করার।’

বাজারের প্রবেশমুখে সচেতনতামূলক ব্যানারটি উল্টিয়ে রাখা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই-তিনডা ব্যানার লাগাইছি। আর পার্সোনালিভাবে আমাদের সবাইরে বলা আছে যে, তোমরা মাস্ক ছাড়া কেউ মাছ বিক্রি করতে পারবা না। আর যারা বাহির থেকে আসে তাদের তো আমরা ওইভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। দেখা যায়, হুট কইরা একজন লোক মাস্ক ছাড়া ঢুইকা পড়ল। জোর কইরা আমরা তাকে আটকাইয়া তো জরিমানা করতে পারি না। আমরা তো প্রশাসন না।’

সাভার উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে মাছবাজার বিষয়টাই এমন, এখানে লোকসমাগম হয়। গত বছর লকডাউনের সময় আমরা বাজারগুলোকে উন্মুক্ত স্থানে নিয়ে গেছিলাম আর কী। এটা শুধু মৎস্য অধিদপ্তরের ওপরেই নির্ভর করে না। সে ক্ষেত্রে উন্মুক্ত জায়গাটাও থাকতে হবে এবং সেখানে সবার সমন্বয়ে কাজটা করতে হবে। ‘ঢাকা জেলার অন্যান্য জায়গায় যেমন নবাবগঞ্জ, দোহারে ওরা উন্মুক্ত জায়গায় বাজার নিয়া গেছে। তবে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এখনও সাভারে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইউএনও মহোদয়কে বলেছি যে, আমাদের এখানে যে আড়তগুলো আছে সেগুলোকে পুরোপুরি স্থানান্তর করা সম্ভব না। কিন্তু কোনোভাবে যদি গ্যাদারিংটাকে একটু কমানো যায় অর্থাৎ টাইমটাকে একটু শিফট করা যায়। যেমন সকালে এক দফা হইল আর বিকেলে এক দফা। তাহলে আর বাজারে মানুষের চাপটা হলো না। মানুষ অর্ধেক কমে গেলেই তো স্বাস্থ্যবিধিটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।’

যেহেতু এই পদক্ষেপগুলো এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে না, সেহেতু এখনকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত গণতান্ত্রিক চিত্রে বাজার ব্যবস্থাপনায় কিন্তু বাজারের শক্তিতেই বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়। এখন সরকার ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ কিছু অবশ্যই নিবে।’

বাজারের কিছু দূরের আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, 'কাল থেকে আমি নিজে মনিটরিং করব ভাই। আমরা তো সতর্ক আছি। তারপরও আপনি বললেন কালকে দেখব।'

সাভার উপজেলার আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে এবং হবে। আর আজকেও একটু পর বাজারগুলোতে ঢুকব।’

এ বিভাগের আরো খবর