ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের একটি মন্দিরের পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে স্থানীয়দের দাবি, বাঘার এই মন্দিরের জমি দীর্ঘদিন ধরেই দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। মন্দিরের জমি দখল নিতেই পুরোহিতকে ধর্ষণচেষ্টার মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে শনিবার স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করা হয়। বাঘায় ধর্ষণচেষ্টার কোনো ঘটনাই ঘটেনি বলেও দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।‘গিরিধারী জিউ মন্দিরে ভক্তবৃন্দের’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থানীয় বাসিন্দা লিংকন দেব।বাঘার কালাকোনা গ্রামের গিরিধারী জিউ মন্দিরের পুরোহিতসহ দুজনকে আসামি করে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন এই গ্রামের এক তরুণী।
বৃহস্পতিবার মামলার পরপর পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিংকন দেব বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথিত ভিকটিমের পরিবারের দেয়া বক্তব্য ও এজাহারে দেয়া বক্তব্যের মধ্যে কোনো মিল নেই।‘মন্দিরের সেবায়েত ও মন্দিরের ভূমিদাতার ছেলেকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টায় বাথরুমে যাওয়ার জন্য বের হলে তাকে ধর্ষণচেষ্টা করা হয়। অথচ তাদের পরিবারই আবার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে- ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের জন্য সেবায়েতের কাছে গেলে তাকে ধর্ষণচেষ্টা করা হয়।’লিংকন দেব জানান, ঘটনার দুই দিন পর ১৫ এপ্রিল বিকেলে পুরোহিতকে সুনাপুর চৌমুহনী অধীরের দোকান নামক বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পুরোহিত বাজারে সবজি কিনতে গিয়েছিলেন।‘কেউ অপরাধ করার পর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। আত্মগোপন করতেন। কিন্তু পুরোহিত স্বাভাবিকভাবেই বাজার করতে গেছেন। তা ছাড়া মামলায় সাক্ষী রাখা হয়েছে অন্য এলাকার বাসিন্দাদের। ঘটনাস্থলের আশপাশের কাউকে সাক্ষী রাখা হয়নি।’লিংকন দেব আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট মন্দির নির্মাণ কাজে বাধা দেয় ধর্ষণচেষ্টা মামলার বাদীর পরিবার। তারা ২ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করে। একই বছরের ২২ ডিসেম্বর মন্দিরে ঢুকে সেবায়েতকে তারা লাঞ্ছিত করে। চাঁদা দাবি ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় করা মামলা সিআইডি তদন্ত করে অভিযোগপত্রও দিয়েছে।’জমি নিয়ে বিরোধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুক্রবার গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধের কথা আমিও শুনেছি। তবে ওই পুরোহিতের চারিত্রিক সমস্যা আছে বলেও এলাকার অনেকে জানিয়েছেন। আরও কয়েকজন নারীকে তিনি কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। এমনকি যে তরুণী মামলা করেছেন তার বড় বোনকেও ওই পুরোহিত কুপ্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। সবকিছুই আমলে নিয়ে আমরা তদন্ত করে দেখছি।’ওসির ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আসা স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার যোগসাজশে মন্দিরের জায়গা দখলের জন্য স্থানীয় কিছু লোক এসব ঘটনা সাজিয়েছে। ওসিকে ওই নেতাই গোলাপগঞ্জ থানায় পোস্টিং করিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিজিত কুমার দাস, বিধান দেব, ঝলক দেব, টিপু দেব, সত্য রঞ্জন বিশ্বাস, উজ্জল দেব, নীরেশ চন্দ্র নম, রাহুল কান্তি দেসসহ আরও অনেকে।