বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য একটি দিন ১৭ এপ্রিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আজকের দিনে মেহেরপুরের মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে।
মুজিবনগরে এবার সীমিত পরিসরে পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস।
এই বছর মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বিবেচনা করে সংক্ষিপ্তভাবে ঐতিহাসিক মুজিবুনগর দিবস পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
পরে বেলা এগারোটার সময় উপস্থিত অতিথিবৃন্দ মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন এমপি, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি, মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক হানিফ বলেন, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা হলো পাকিস্তানের দোসর। তারা এখনও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এখনও ক্ষান্ত হয়নি এখন শুরু করেছে হেফাজতের সঙ্গে আঁতাত।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রবিরোধী উসকানিসহ রাষ্ট্র ধ্বংসের নীল নকশায় ব্যস্ত তারা । তাদের এখনই জবাব দেওয়ার সময়। তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর বরদাশত করা হবে না। দেশবিরোধী কাজে লিপ্তদের এ দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই ‘
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই সরকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি করা হয়। এ ছাড়া তাজউদ্দীন আহমেদকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী এবং এ এইস এম কামরুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে অস্থায়ী সরকারের মুক্তি বাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আব্দুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। খবরটি পরের দিন দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা ও প্রচার করা হয়।
পরবর্তীতে এই বৈদ্যনাথতলার নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর নামের সাথে মিল রেখে নাম করন করা হয় মুজিবনগর যা আজ বাংলাদেশের বুকে মুজিবনগর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।