মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় শহর রক্ষা বাঁধকে ঘিরে সড়কের পাশে অবৈধভাবে দখল করে প্রায় ২৫টি স্থানে চলছে বালুর ব্যবসা।
সড়কে বালুর আস্তরণ পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন এই পথে চলাচলকারী পথচারী ও যানবাহন চালকরা।
সরোজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের মালিপাথর, ফিরিঙ্গি বাজার, মিরেশ্বর ও নোয়াগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় সড়কের পাশে অবৈধভাবে দখল করে বালুর ব্যবসা করছে প্রভাবশালী একটি মহল। এসব বালু মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নিয়ে এসে উপজেলায় শহর রক্ষা বাঁধের পাশে অবৈধভাবে স্তুপ করে রাখা হয়। তার পর ধীরে ধীরে সেখান থেকে বিক্রি করা হয় বালু।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম মোস্তফা, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সম্মিলিতভাবে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে এসব অবৈধ বালু ব্যবসা। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে ব্যবসা করলেও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোন মাথা ব্যাথা।
এ দিকে বালু ব্যবসায়ীদের কারণে মুন্সিগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধটির মালিরপাথর এলাকার বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। এ ছাড়া ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় বাঁধের উপর দিয়ে ড্রেজারের পাইপ বসিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করছেন ওই প্রভাবশালী চক্রটি। সড়কের মধ্য দিয়ে ড্রেজারের লোহার পাইপ যাওয়ায় ছোট যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।
বালু ব্যবসায়ীদের কারণে মুন্সিগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধটির মালিরপাথর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
মালিপাথর এলাকার মেসার্স মোল্লা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, কয়েক বছরে রাস্তার দুই পাশে অন্তত ৩৫টির মত নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ।
রাস্তার পাশে এ ধরনের বালু একাধিক স্তুপ হওয়ায় বাতাস আসলেই বালু উড়ে পথযাত্রীদের নাকে মুখে ঢুকছে।
এ পথে চলাচলকারী যানবাহন চালকদের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক তারা মিয়া বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করার সময় ধুলাবালিতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। মাস্ক পড়েও ধুলাবালি আটকানো যায় না। ধুলাবালিতে কোনো কিছু দেখতে না পেয়ে দুর্ঘটনার আশংকা বাড়ে।’
এ পথে নিয়মিত চলাচল করে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাদের মধ্যে রাকিব হোসেন বলেন, বালু ব্যবসার কারণে মারাত্মক ভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ধুলাবালির মধ্যে দিয়ে তাদের কলেজে যেতে হয়। ধুলাবালি নাক-মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে ঢুকে নানা রকম রোগের সৃষ্টি করে।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ‘যত্রতত্র রাস্তার আশেপাশে বালুর স্তুপ ফেলার কারণে ধুলাবালিতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। তবে বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাদের সরাসরি আইন প্রয়োগ করার এখতিয়ার নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসনের এখতিয়ারভুক্ত।’
মন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়াত হাসান শিপলু বলেন, ‘যারা ব্যক্তিগত জায়গায় ব্যবসা করছেন তাদের মাধ্যমে যাতে পরিবেশ দূষিত না হয় সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক করা হবে। পাশাপাশি যারা অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন সেগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।