করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমাতে দেশে সরকারি বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনে রাজধানী ঢাকার বেশ কিছু বাজারে ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে চার থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত। এর কারণ হিসেবে দোকানিরা বলছেন, সরবরাহ কম।
অন্যদিকে শুধু যমুনা পারের জেলা সিরাজগঞ্জেই দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ১০ লাখের বেশি ডিম। সরকারি বিধিনিষেধে সঠিকভাবে এসব ডিম অন্য জেলায় সরবরাহ করতে না পারায় লোকসান গুনছেন খামারিরা।
জনসাধারণের প্রাণিজ পুষ্টি নিশ্চিতে সিরাজগঞ্জে ন্যায্যমূল্যে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে করে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। কিন্তু সাধারণ মানুষের চলাচল আর দোকানপাট বন্ধ থাকায় ডিম বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৩ হাজার ৭৭৭টি পোল্ট্রি খামার হতে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডিম উদৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ডিম জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলাতে সরবরাহ করা হয়।
দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ডিম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। ছবি: নিউজবাংলা
প্রতিদিন ১০ লাখ ডিম উৎপাদন হলেও জেলার চাহিদা মাত্র ২ লাখ। বাকি ৮ লাখ ডিম পাঠানো হতো অন্য জেলায়। লকডাউনে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ডিম বিক্রি করতে পারছেন না খামারিরা।
অতিরিক্ত গরম পড়ায় সংরক্ষণের আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেকে ডিম।
জেলার শিয়ালকোল এলাকার পোল্ট্রি খামারি শাহীন রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার খামারে ২৮ হাজার মুরগি আছে। এর মধ্যে প্রতিদিন ১৪ হাজার ডিম পাই।
‘গত ১০ দিনের লকডাউনে প্রতিদিন প্রাণিসম্পদের এই ভ্রাম্যমাণ ভ্যান ২ হাজার করে ডিম নিচ্ছে। বাকী ১২ হাজার ডিম আমি কি করব? মুরগির খাদ্যের দাম অনেক বেশি। ডিম বিক্রি করতে না পারলেও খাবারও কেনা যাচ্ছে না।’
সিরাজগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় ডিম। ছবি: নিউজবাংলা
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার সভাপতি এসএম ফরিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভালো নেই আমাদের পোল্ট্রি খামারিরা। অথচ দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা আমরাই পূরন করি।
‘সরকার হাতে গোনা কয়েকজন খামারিকে কিছু সহযোগিতা করলেও সিংহ ভাগ খামারি কিছুই পায়নি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, এই সময় জেলার খামারিদের উৎপাদিত ডিম নিয়ে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য বাংলাদেশ পোল্ট্রি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএফএ), প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প ( এলডিডিপি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জ জেলা ও উপজেলায় ১০ দিনব্যাপী মোট ৪৪টি ন্যায্যমূল্যের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে বিক্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ পিচ ডিম উৎপাদন হয় খামার থেকে। ছবি: নিউজবাংলা
‘এ কেন্দ্রগুলোতে ফার্মের মুরগির ডিম ২৬ টাকা হালি, সোনালী মুরগির মাংস প্রতি কেজি ২৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এই ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র চালুর ফলে খামারিরা তাদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগি সহজেই বিক্রি করতে পারবেন।’
অবশিষ্ট ডিম যাতে রাজধানীসহ অন্য জেলাতে পাঠানো যায় সে জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া খামারিরা যাতে লোকসানে না পড়েন সেদিকেও নজর রাখার কথা জানান তিনি।