মার্চের শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে উসকানিদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে তাদের একজনকে চিহ্নিত করতে পারলেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
পুলিশ বলছে, ‘আলোকিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে একের পর এক উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে মাদ্রাসাছাত্রদেরকে উত্তেজিত করা হয়েছে। জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
এই গ্রুপের অ্যাডমিন আদনান হোসেন উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তারে পুলিশ একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। তবে তাকে ধরা যায়নি।
আত্মগোপনে থাকা এই আদনানের ফেসবুক আইডি এখনও সচল রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দিন ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।
সেদিন শহরের রেল স্টেশনে দেয়া আগুনে সংকেত ব্যবস্থা নষ্ট হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন এই সংকেত ব্যবস্থা পুনস্থাপন করতে দুই থেকে পাঁচ মাস সময় লেগে যাবে।
সেদিন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়, আগুন দেয়া হয় আনসার ক্যাম্পে। হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও।
দুই দিন পর ২৮ মার্চের আক্রমণ ছিল আরও ব্যাপক। জেলা পরিষদ পৌরসভা কার্যালয়, ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আক্রমণ হয় গ্যাস বিতরণ সংস্থা বাখরাবাদে। ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয় জেলা শহরে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্নে। এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকও ভাঙচুর করা হয়েছে।
আগুন দেয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: নিউজবাংলা
সব মিলিয়ে ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাদের বাড়িঘরে চলে আক্রমণ।
পুলিশ জানায়, ২৭মার্চ রাতে 'আলোকিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া' নামের ফেসবুকের এডমিন আদনান হোসেন উজ্জ্বল গ্রুপে উসকানিমূলক পোস্ট করেন। তিনি লিখেন,‘বঝা যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৌহিদী জনতা গর্জে উঠেছে। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে আরও শক্ত করার তৌফিক দান করুক। ভয়কে নিয়ে নয় আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আলোকিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া আপনাদের পাশে আছে সার্বক্ষণিক।
নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আপনারা যারা একটু ফ্রি আছেন, আপনাদের ফ্রেন্ডলিস্টের সকল মুসলিম ভাই ও বোনকে ইনভাইট করে গ্রুপের সাথে যুক্ত করুন....ইসলামের জিহাদের সাথে...বা প্রত্যেকটি আপডেট পেস্ট ফ্রেন্ডলিস্টের সকল ফ্রেন্ডদের মেনশন করুন।’
জেলায় চলা উন্নয়ন মেলায় তাণ্ডব চালায় হেফাজত। ছবি: নিউজবাংলা
এই গ্রুপে এসএম সোহেল রানা নামের একজন তার পোস্টে লিখেন, 'বি-বাড়িয়াতে অসংখ্য পুলিশ, বিজিবি ও অ্যাম্ব্যুলেন্স প্রবেশের তথ্য পাওয়া গেছে। যা বিশ্বযোগ্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছেন। অনেকে এমনও জানিয়েছে বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) প্রবেশ করেছে দলে দলে। ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে বি-বাড়িয়ায়। আশপাশের শহরের ভাইয়েরা বি-বাড়িয়ার দিকে যাওয়া আব্যশক হয়ে গেছে। সাহসী মানসিকতা তৈরির সময় এসে গেছে। ভিতু থাকলে এবার শুধু রক্তই ঝরবে।’
এই ফেসবুক গ্রুপের কর্মকাণ্ডে জেলার অন্যান্য সামাজিক গ্রুপ গুলোও বিব্রত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সামাজিক সংগঠনের এডমিন বলেন, ‘আমরা সামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রুপ করেছি। বিভিন্ন সময়ে নিজেদের চাঁদার টাকা সাহায্য সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আলোকিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রুপ ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপগুলোর কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নে সম্মুখীন করেছে। কোনো সংগঠনের কাজ সমাজে অস্থিতিশীল করা নয়।’
জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুজন দত্ত বলেন, ‘আমরা দেখছি আদনান হোসেন উজ্জ্বল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটিভ। কিন্তু তাকে কেন এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না তা বুঝে আসছে না।’
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) রইছ উদ্দিন বলেন, 'আমরা ফেসবুক পেইজগুলো মনিটর আগেও করেছি, এখনও করছি। যারা সহিংসতায় উসকানিদাতা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
‘আদনান হোসেন উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করতে ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। সে পলাতক আছে। ফেসবুকে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’