বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিল্পীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কাদের হাতে

  •    
  • ১৫ এপ্রিল, ২০২১ ১৬:৩৭

দোকানের সেলসম্যান, ভারতে অবস্থানকারী পরিবার, কোটিপতি, একই পরিবারের ১৪ জন, অন্য জেলার মানুষকে শিল্পী দেখিয়ে বিতরণ করা হয়েছে অর্থ। তবে অর্থাভাবে কষ্টে থাকা আলোচিত শিল্পী পেলেন না সহায়তা।

করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঠানো ৫০ লাখ টাকা অপাত্রে বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। আবার যাদের নামে চেক ইস্যু করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একাধিক জন জানিয়েছেন, কোনো টাকাই পাননি।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের বাইরে বসবাস করেও ত্রাণের টাকা পেয়েছেন। ভারতে বসবাসরত পরিবার, কোটিপতি, জীবনে কখনও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না এমন বহুজনের নামে ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা চেক হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত চক্রবর্তীর বোন বিথি চ্যাটার্জি এবং তার স্বামী আনন্দ চট্টোপাধ্যায়ের নামে দুটি চেক ইস্যু করা হয়েছে। অথচ তারা গত এক বছর যাবত ভারতে বসবাস করছেন।

তার পরিবারের আরও অন্তত ১৪ জনের নাম রয়েছে। মাগুরার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যাদের কখনই সংশ্লিষ্ট দেখা যায়নি।

তালিকার ২২৯ নং ক্রমিকে পবিত্র কুমার চক্রবর্তী নামে স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানের সেলসম্যানকে নাট্যশিল্পী হিসেবে দেখানো হলেও তিনি জীবনে কোনদিন নাটকের স্টেজে উঠেছেন বলে জানা নেই। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর ভগ্নিপতি।

বিশ্বজিতের নিকটাত্মীয়, দূর সম্পর্কের স্বজন-বহুজনের নামে ইস্যু করা হয়েছে চেক।

২৩০ নং ক্রমিকে ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী বিশ্বজিতের ভাইপো, ২৫৫ ক্রমিকের বরুণ চক্রবর্তী বড় ভাই, ২৫৬ ক্রমিকের ইতি চক্রবর্তী ছোটবোন, ২৬৪ ক্রমিকের প্রণয় চক্রবর্তী ভাগনে, ২৬৫ ক্রমিকের প্রিয়াংকা চক্রবর্তী ভাগনে, ২৬৬ গোপাল চক্রবর্তী চাচাত ভাই, ২৬৭ বন্দনা চক্রবর্তী ভাইয়ের বৌ, ২৬৮ প্রদীপ চক্রবর্তী চাচত ভাই এর ছেলে, ২৭০ কার্তিক চক্রবর্তী চাচাত ভাইয়ের ছেলে, ২৭১ সুদীপ্ত চক্রবর্তী ভাতিজা, ২৭২ আনন্দ চক্রবর্তী ভগ্নিপতি, ২৭৪ বিথি চক্রবর্তী ছোট বোন, ২৫৭ নং ক্রমিকে ছবি রানী ভট্টাচার্য ভাইয়ের স্ত্রী।

শহরের কেশব মোড়ের বাসিন্দা বর্তমানে স্বামীর কর্মস্থল ঢাকায় অবস্থানরত স্নিগ্ধা পাল নামে এক সাবেক নৃত্য শিল্পী ও তার মায়ের নামে ১০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কাস্টমস বিভাগে কর্মরত জনৈক ব্যক্তির স্ত্রী স্নিগ্ধা পালের মাগুরা শহরে দুইটি ফ্লাট, একটি বাড়ি ও একটি বিশাল বাগান বাড়ি রয়েছে। যার মূল্যমান কমপক্ষে তিন কোটি টাকা। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তাকে ও তার মা জোসনা পালকে ১০ হাজার করে দুটি চেক দেয়া হয়েছে।

মাগুরা শিল্পকলা একাডেমির সংগীত শিক্ষক অজিত রায় শহরের সাতদোহা পাড়ার একই পরিবারের সন্ধ্যা রানী ঘোষ (ক্রমিক নং-৪১৯), প্রিয়া ঘোষ (৪৪), রিয়া ঘোষ (৮৫), ডলি ঘোষ (১০৪), আপন ঘোষ (১০৫) ও লিলি ঘোষ (১৭২) নামে চেক বরাদ্দ করেছেন। এদের কারও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

তালিকায় ২২ নম্বর ক্রমিকে অচলা মন্ডল নামে একজনকে সঙ্গীত শিল্পী দেখিয়ে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও ওই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি।

ওই নামের পাশে সাতক্ষীরার আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মোবাইল নম্বর যুক্ত করা হয়েছে যিনি কখনও মাগুরাতে আসেননি বলে নিউজবাংলাকে জানান।

তালিকায় ৫৮ নম্বর ক্রমিকে মাগুরার সঙ্গীত শিল্পী কবরি ঘোষের নাম রয়েছে। তার নামে ১০ হাজার টাকার চেক বরাদ্দ দেয়া হলেও তিনি কোনো প্রকার আর্থিক সহায়তা পাননি। তার নামে চেক ছাড় করানো হলেও তা থেকে কবরি ঘোষকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

আবার আঞ্চলিক গানের জন্যে প্রখ্যাত মাগুরার কণ্ঠশিল্পী অনিল হাজারিকা অসহায় অবস্থায় বাড়িতে পড়ে থাকলেও তিনি পাননি সহায়তা।

এভাবে নামে-বেনামে ৪৩৮ জনের নামে বরাদ্দকৃত ৪৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ছাড় করিয়ে অধিকাংশ অর্থই নিজেরা আত্মসাৎ করেছেন বলে মাগুরার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

একজনের চেক অন্য জন আত্মসাতের সুযোগ পেয়েছেন সেগুলো অ্যাকাউন্ট পেয়ি ছিল না বলে। রূপালী ব্যাংক থেকে ইস্যু করা চেকগুলো যে কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা দিলেই তা ক্যাশ করে দেয়া হয়েছে।

গত ১৯ মার্চ মাগুরা আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪৩৮ জনের নামে চেক বরাদ্দ দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে অল্পসংখ্যক ব্যক্তিদের মধ্যে চেক বিতরণ করা হলেও বেশিরভাগ ইস্যু করা চেক তুলে নেন ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, শিল্পকলা পরিচালনা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত চক্রবর্তী এবং সঙ্গীত শিক্ষক অজিত রায়ের নাম এসেছে এসব অনিয়মে।

তবে জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মাগুরাতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এখানকার শিল্পীদের অনেককেই চিনি না। নাম সংগ্রহ করেছেন মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যরা। এখানে এর বেশি সংশ্লিষ্টতা আমার নেই।’

স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের এই টাকা শিল্পীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সাউন্ড অপারেটর থেকে শুরু করে ডেকোরেটরের কর্মচারীরাও পেয়েছে। অনেককেই আবেদন করতে বলা হয়েছে। সবাই গুরুত্ব দেয়নি।’

তবে মাগুরা জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছে। ভুয়া কোনো ব্যক্তি যাতে এই অর্থ না পায় সেই চেষ্টা করেছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর