করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের এক সপ্তাহের লকডাউনে উৎপাদিত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের খামারিরা।
সঠিক দামে দুধ বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনছেন অনেকে। বিক্রি করতে না পারায় অনেকেই রাস্তায় ঢেলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সংরক্ষণের অভাবে নষ্টও হচ্ছে হাজার হাজার লিটার দুধ।
দেশের গো-চারণভূমি খ্যাত সিরাজগঞ্জের সমবায় ভিত্তিক গরুর খামারিরা এমন অবস্থায় দিশেহারা। ছোট খামারিদের অনেকেই গরু বিক্রি করতে হাটে হাটে ঘুরছেন।
জেলার প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারাখানা গড়ে ওঠে। এরপরই অঞ্চলটিতে হাজার হাজার গরুর খামার গড়ে ওঠে।
সেখান থেকে মিল্ক ভিটা এখন প্রতিদিন ২ লাখ ২৫ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে। তরল দুধ, পাউডার দুধ, কনডেন্সড মিল্ক ও খাঁটি গাওয়া ঘি তৈরি করে দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করছে।
বর্তমানে জেলায় ১৫ হাজার ৩৮০টি সমবায় ভিত্তিক গো-খামারের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ গবাদিপশু থেকে প্রতিদিন ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
খামারিরা বলছেন, গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ক্রমাগত বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। সেই তুলনায় বাড়েনি দুধের দাম।
এ ছাড়া ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব হওয়ায় বেড়েছে গবাদি পশুর অসুখ। অনেকেই গরু মারা গেছে সে অসুখে, আবার কারও গরু বিক্রি করে দিতে হয়েছে কম মূল্যে।
শাহজাদপুর রেশমবাড়ীর খামারি ও মিল্ক ভিটার পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকির নিউজবাংলাকে জানান, দিনে যে দুধ উৎপাদন হয় তার মধ্যে জেলায় চাহিদা আট লাখ লিটার। তা মিটিয়ে এই দুধ চলে যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে।
উৎপাদিত দুধের একটা অংশ কেনে প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার, ঈগলু। তারা সবাই মিলে নেয় সাড়ে তিন লাখ লিটার। অবশিষ্ট নয় লাখ লিটার দুধ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হোটেল ও মিষ্টির দোকনে সরবরাহ করা হয়।
সামাদ ফকির বলেন, ‘গত নয়দিন থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল না করায় নাম মাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার অনেকে দাম না পেয়ে রাস্তায় ফেলেও দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খামারিরা পথে বসবেন।’
কান্দপাড়া এলাকার তালুকদার ডেইরি ফার্ম লিমিটেডের পরিচালক মনিরা তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ৭০টি গরুর মধ্যে ২০ গরু থেকে প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ উৎপাদন করি। বর্তমান করোনার জন্য ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারছি না।
‘গত বছরে যে লোকসান হয়েছে এ বছরে তার চেয়ে বেশি হচ্ছে। আমরা হয়তো আর খামার চালাতে পরব না।’
ছোট ছোট খামারিরা গরু বিক্রি করতে হাটে হাটে ঘুরছেন বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, আমরা খামারিদের কথা ভেবে মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার, ঈগলু কোম্পানিদের বলেছি, এই সময়ে কোনোভাবেই দুধ কম নেয়া যাবে না।
‘সেই সঙ্গে খামারিদের উৎপাদিত অবশিষ্ট দুধ বাজারে সঠিকভাবে বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যে সকল খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারবে তারা এই ভ্রাম্যমাণ গাড়ীতে দুধ দেবে।’
এই গাড়ি প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা মনিটরিং করবে। এভাবে দশদিন তারা ভ্রাম্যমাণ সেবা দেবেন খামারিদের। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।