শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল এখন রোগীদের জন্য আতঙ্কের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কক্ষগুলো অনেদিন ধরেই বেহাল। এরমধ্যে ধসে পড়েছে একটি কক্ষের পলেস্তারা। ঝুঁকি নিয়ে সেখানে চলছে সেবাদান।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য জরুরি রোগীর এক্স-রে পরীক্ষা। সেই এক্স-রে কক্ষেরই পলেস্তারা খসে পড়েছে। এতে করোনা চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুমন কুমার পোদ্দার।
এ ছাড়া বারবার ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চিকিৎসক, কর্মচারী ও রোগীদের মাঝে। গণপূর্ত বিভাগ মাঝেমধ্যে সংস্কার করলেও পরিত্যক্ত ঘোষণা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
সদর হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে কক্ষের ছাদের একটি বড় অংশ গত শনিবার রাতে খসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ব্যাহত হয় চিকিৎসা কার্যক্রম।
কক্ষে কর্মরত রেডিওলজিস্ট ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চোখে-মুখে আতঙ্ক।
রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, এক্স-রে কক্ষের ছাদের অর্ধেক অংশ খসে পড়েছে। নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে পলেস্তারা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক্স-রে যন্ত্রপাতি। অন্য কক্ষের ছাদে ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।
তবে ওই বিভাগের অন্য কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে স্বল্পপরিসরে পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও ভিড় রয়েছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের আড়িগাঁও গ্রামের জয়নাল আবেদিন বুকের এক্স-রে করার জন্য হাসপাতালে এসেছেন। সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানও ছিল।
ভেতরে প্রবেশ করেই আতকে ওঠেন তারা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষের এক পাশের চেয়ারে বসে শুধু উপরের দিকেই তাকিয়ে আছেন। কথা হয় জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ হইয়া হাসপাতালে ভর্তি আছি। ডাক্তারে এক্সরা দিছে। এক্সরা করতে আইছি আর দেহি ছাদের দেয়াল ভাঙগা। আবার যেহানে বইস্যা রইছি এদিক দিয়া ফাডা। অহন এক্সরা করতে আইসা আমার ভয় লাগদাছে বেশি। এমনেই বুকে ব্যথা অহন আরও অসুস্থ্ লাগতাছে।’
শরীয়তপুর সদর হাসপতাল
অন্য একটি কক্ষে রেডিওলজিস্ট আকতার হোসেন তার সহকারী নিয়ে কাজ করছেন। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনাটি শনিবার রাতে ঘটেছে। যদি দিনে ঘটত তাহলে প্রাণহানির মতো ঘটানাও ঘটতে পারত। কারণ, দিনে রোগী থাকে বেশি।
তিনি আরও জানান গত বছর বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগে জানানো হলেও এক বছরে কোনো সংস্কার হয়নি। এই বিভাগের তিনটি কক্ষের ছাদ, দেয়াল ও বিমে বড় বড় ফাটল রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের কাজ করতে হচ্ছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের করোনা রোগীদের সিমটমের ডায়াগনস্টিক করার অন্যতম পন্থা হচ্ছে এক্স-রে। যেহেতু সিটি স্ক্যান হয় না সেহেতু এক্স-রে দিয়া আমরা অনেকটা বুঝতে পারি।
‘ধসে যাওয়ার কারণে আমরা ওইভাবে এক্স-রেটা করতে পারতেছি না এবং রোগীরাও ভোগান্তি পোহাচ্ছে। মূলত বিল্ডিংটা এখন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা উচিত। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার নক করার পরও তারা এটার কোনো পজিটিভ ফিডব্যাক দিচ্ছেন না। এটাই আমাদের আফসোস।’
তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালে নিচতলার করিডরের বিভিন্ন অংশের ছাদের পলেস্তারা খসে তিন ব্যক্তি আহত হয়েছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছিল। সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক মুনীর আহমেদ।
সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ আল মুরাদ নিউজবাংলাকে জানান, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এর আগেও কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয়, সে জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়েছে। দ্রুত সংস্কারকাজ করা হবে। পাশাপাশি নতুন ভবনের কাজ এগিয়ে চলছে।’