সাতক্ষীরায় বোরো ক্ষেতে এবারও ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় দিশেহারা সেখানকার কৃষকেরা। ধান পাকার ঠিক আগ মুহূর্তে এ রোগ দেখা দেয়ায় উৎপাদন খরচের টাকাও উঠবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
ছত্রাকে আক্রান্ত ধান পরিণত হচ্ছে চিটায়। তবে রোগের বিস্তার বন্ধে ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন।
পানির ঘাটতি না থাকা ও অনুকুল আবহাওয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন কৃষকেরা। তবে গতবারের মতো এবারও বিধিবাম।
তালা ও কলারোয়া উপজেলার শতাধিক হেক্টর জমির ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ছত্রাক আক্রমণ করার তিন/চার দিনের মধ্যে শীষের ধান শুকিয়ে চিটায় পরিণত হচ্ছে। মধ্য বৈশাখে ব্রি-২৮ ধান কাটার সময় হলেও রোগের কারণে আগাম ধান কাটছেন চাষি।
তালা উপজেলার চোমরখালি গ্রামের চাষি হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘ধান গাছে যখন শীষ বের হচ্ছে,তখন এ রোগটা দেখা দিচ্ছে। বাইল (ধানের শীষ) শুকিয়ে ধান চিটায় পরিণত হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবে এর প্রতিকার পাচ্ছি না। ব্লক সুপারভাইজাররা (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) আসেননা। আমরা চাই, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের এ ব্যাপারে ভালো পরামর্শ দিক। যাতে আমরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারি।’
একই এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মধ্য বৈশাখ বা শেষ বৈশাখে সাধারণত ২৮ ধান পাকে। সেই হিসেবে এখনো আমাদের ধান ১৫/২০ দিন পর পাকবে। অথচ ধানের শীষ শুকিয়ে যাওয়ার কারণে আগাম কাটছি। তবুও বিঘাতে ৪/৫ মনের বেশি ধান পাব না।’
কলারোয়া উপজেলার জয়নগর এলাকার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে ২৮ জাতের ধান ২০ থেকে ২৫ মন উৎপাদিত হয়। যার মূল্য প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। ধানে যেভাবে ছত্রাক লেগেছে তাতে উৎপাদন খরচও উঠবে না। এ ছাড়া ছত্রাক লাগা ধানের যে বিচালি, তা খুবই তিতা। এই তিতা বিচালি গরুও খায় না।’
সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এবার ফলন ভালো হবে। উত্তরবঙ্গের মতো সাতক্ষীরায় গরম হাওয়ায় ধান পুড়ে যায়নি। তবে তালা ও কলারোয়ার কিছু ক্ষেতে ব্লাস্টের কিছু আক্রমণ আমরা দেখতে পেয়েছি। যে সব জমিতে চাষিরা প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা নেয়নি,তাদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে।’