বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘জমি চলে গেলে কীভাবে সংসার চালাব’

  •    
  • ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:২৭

‘শিবগঞ্জ কৃষির জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা। এখানে ফসল ফলানো বাদে পার্ক হবে এটা কেমন কথা। আমার জমি দিতে রাজি নই। প্রয়োজনে প্রাণ দিব।’

বগুড়ার শিবগঞ্জে শিল্পপার্ক স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশে করেছেন স্থানীয় কৃষকসহ নানা শ্রেণি পেশার কয়েক হাজার মানুষ।

তাদের অভিযোগ, উপজেলায় তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি ও অনাবাদি দেখিয়ে সেখানে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছে বিসিকি।

মোকামতলা-জয়পুরহাট আঞ্চলিক সড়কে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া কর্মসূচি চলে দুপুর পর্যন্ত। সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায় নারীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিবগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদ সাবু, মোকামতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোকলেছার রহমান খলিফা, আওয়ামী লীগের মোকলেছার রহমান মুন্নু, যুবলীগের শহিদুল ইসলাম, ছাত্রলীগের রাকিব আকন্দসহ আরও অনেকে।

১ এপ্রিল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) একটি চিঠি পাঠায় সংস্থার বগুড়া জেলা কার্যালয়ে। চিঠিতে বলা হয়, বগুড়ায় কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপার্ক স্থাপনের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন এক সভায় বগুড়া শিল্প পার্কের জন্য সোনাতলা থেকে মোকামতলার মাঝখানে চিহ্নিত ৫০০ একর জায়গা বাদ দেয়। এরপর বগুড়ার তিনটি স্থান পরিদর্শন করেন বিসিক কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে শিবগঞ্জের দুটি ইউনিয়নের উথুলি, নারায়নপুর, ধোন্দাকোলা, সন্নাসী, চাঁনপুর, খালিমপুর, ছলেমান ও হরিপুর এলাকায় ৫০০ একর জমি অনাবাদি বা এক ফসলি হিসেবে পাওয়ার কথা জানানো হয়।

সেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সহজ হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এই জমি বরাদ্দের সম্মতি প্রদানসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

কৃষকরা বলছেন, ‘বিসিক প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ না করে আমাদের এলাকার ৫০০ একর উর্বর ফসলি জমিকে অনুর্বর ও এক ফসলি জমি দেখিয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে।’

এলাকাবাসীর দাবি, শিবগঞ্জের ওই সাতগ্রামে অন্তত ১৮ হাজার লোকের বাস। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি সংখ্যালঘু পরিবার। বিসিকের প্রস্তাবিত ৫০০ একর জমির মধ্যে সাধারণ মানুষের বসতিও রয়েছে।

মানববন্ধন চলাকালে কথা হয় স্থানীয় শ্যামাঙ্গা মদনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা মাতাল হয়ে আমাদের তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি দেখিয়ে পার্ক করার প্রস্তাব হাজির করেছেন। এক বিঘা জমিতে আমি কাঁচা মরিচ, হলুদসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করে সংসার চালাই। এই জমি চলে গেলে আমি কীভাবে সংসার চালাব?’

বিসিক প্রস্তাবিত এলাকার মধ্যে ৬ বিঘা জমি রয়েছে ধান্দাকোলার নারায়ন সরকারের। তিনি বলেন, ‘শিবগঞ্জ কৃষির জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা। এখানে ফসল ফলানো বাদে পার্ক হবে, এটা কেমন কথা। আমার জমি দিতে রাজি নই। প্রয়োজনে প্রাণ দিব।’

কৃষিই একমাত্র আয়ের উৎস চানপুরের সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমি দিয়ে সংসার চলে। এই জমি গেলে আমি নিঃস্ব হব। আমাদের এখানকার জমিগুলো আসলে জমি নয় যেনো সোনার থালা। এখানে বছরে তিনবার সোনা ফলে। এই জমি অনাবাদি বলার সাহস হলো কীভাবে বিসিকের?’

ওই এলাকায় এরই মধ্যে জমি রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহী সানোয়ার বলেন, ‘শিবগঞ্জ দেশের সবজির অন্যতম এক কারখানা। এই এলাকায় তিন ফসলি জমিতে পার্ক নির্মাণ করা কোনাভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। এই কারণে আমরা সরকারের এই প্রাথমিক প্রস্তাবের বিরোধীতা করছি। আমরা আসলে কৃষি কাজ করেই বাঁচতে চাই। জমি কেড়ে নিলে আমরা মরে যাব।’

জমি রক্ষার জন্য গত ৭ এপ্রিল এলাকাবাসীর পক্ষে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলমগীর কবিরের কাছে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে।ইউএনও আলমগীর কবির নিউজবাংলাকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যতদূর জানি এটা এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি।’

বগুড়ার বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান বলেন, ‘এখানে শিল্প পার্ক হলে কৃষকরাই উপকৃত হবেন। কর্মসংস্থান হবে প্রায় এক লাখ মানুষের। ওই এলাকার ৬০ শতাংশ লোক শিল্পপার্ক চান, ৪০ শতাংশ বিরোধীতা করছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর