বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নববর্ষ উপলক্ষে ইলিশ ধরতে বেপরোয়া জেলেরা

  •    
  • ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:২৮

জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে কষ্ট হয়ে যায়। তার ওপর ঋণের কিস্তির বোঝা বইতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ইলিশ ধরতে নামেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে গত বছরের মতো এবারও পয়লা বৈশাখ উদযাপনে বিধিনিষেধ দেয়া হলেও ইলিশ ধরায় থেমে নেই ‘অসাধু’ জেলেরা। অধিক মুনাফার লোভে সরকারের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ ধরতে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছেন তারা।

বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে বৈশাখে ইলিশের দাম থাকে সবচেয়ে বেশি। এ জন্যই ইলিশ ধরতে কোনো বিধিনিষেধ মানছেন না জেলেরা। দলে দলে মাছ শিকারে নামছেন তারা।

জাতীয় মাছ ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে জেলেরা যেন নদীতে নামতে না পারেন, সে জন্য জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগের লোকজন নিয়মিতভাবে টহল দিচ্ছেন।

কিন্তু অনেক জেলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রকাশ্যে দিনে ও রাতে জাটকা ধরে যাচ্ছেন। নববর্ষ উপলক্ষে জেলেদের অধিক মুনাফার লোভে নির্বিচারে মারা পড়ছে জাটকা ইলিশ।

সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে বিল্লাল মাঝি নিউজবাংলাকে জানান, নববর্ষের উৎসব ঘিরে ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় দামও অনেক বেশি পাওয়া যায়। তাই অনেক জেলে ধরা পড়ার ঝুঁকি নিয়েও নদীতে যান ইলিশ ধরতে। জালের মধ্যে দু-চারটি ইলিশ ধরা পড়লেই লাভবান হন জেলেরা।

একই এলাকার জেলে বাদশা মিয়া জানালেন, প্রকারভেদে একেকটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। মাঝারি সাইজের প্রতি পিস ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ২ হাজার টাকায়। আর ১ কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার বহরিয়া, পুরানবাজার, রনগোয়াল এলাকার জেলেরা জানান, এই সময়ে ইলিশ না ধরার শর্তে সরকারি সহায়তা পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের মধ্যে অনেকে কোনো সহায়তা পাননি।

তারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে কষ্ট হয়ে যায়। তার ওপর ঋণের কিস্তির বোঝা বইতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ইলিশ ধরতে নামেন। অনেক সময় প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লে জেলে পাঠিয়ে দেয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চাঁদপুর মেঘনায় চলছে ইলিশ ধরা উৎসব। ছবি: নিউজবাংলা

এ ব্যাপারে নৌপুলিশ সুপার (চাঁদপুর অঞ্চল) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, জাটকা রক্ষায় নদীতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। এরপরও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু অসাধু জেলে নদীতে নেমে মাছ শিকার করে। তাদের ধরে আইনের আওতায়ও আনা হচ্ছে।

‘এত বড় নদী পাহারা দিয়ে জাটকা সংরক্ষণ করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষজনকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই সচেতন হলে এই অভিযান আরও বেশি সফল হবে।’

জেলা মৎস্য অফিসের দেয়া তথ্যমতে গত ১ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে ৪২৭টি অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৮ মেট্রিক টন জাটকা, ৯০ লাখ মিটার কারেন্ট জালসহ বিপুলসংখ্যক নৌকা জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৩৬ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দুই শতাধিক জেলেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, ‘নববর্ষ উপলক্ষে কিছুটা বাড়তি লাভের আশায় অসাধু জেলেরা নদীতে নামে ইলিশ ধরতে। এই সময়টাতে সাধারণ মানুষের মাঝে ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় সুযোগটা কাজে লাগাতে চান জেলেরা। তবে আমরাও নববর্ষকে কেন্দ্র করে নদীতে পাহারা জোরদার করেছি। জেলেরা যেন কোনো অবস্থাতেই নদীতে নামতে না পারেন, সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।

‘নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশ খাওয়ার যে একটা প্রথা রয়েছে, তা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যদি সচেতন হয়ে নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে ইলিশ খাওয়া বন্ধ রাখে, তবে দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির যে ধারা তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় মাছধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৫১ হাজার ১৯০ জন জেলে। নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ৪০ হাজার ৫ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে ৪ মাস চাল দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর