রাত পোহালে মারমা সম্প্রদায়ে সাংগ্রাই, চাকমা-তঞ্চগ্যাদের বিজু, ত্রিপুরাদের বৈসুক, ম্রোদের সানক্রাং, খিংয়াংদের বিহু। প্রতিবছর ১৩ এপ্রিল বর্ষবরণ উপলক্ষে ‘বৈসাবি উৎসবে’ মাতে বান্দরবানের ১০ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে ‘লকডাউনের’ কারণে গত বছরের মতো এবারও হচ্ছে না কোনো উৎসব।
বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা জানান, বিধিনিষেধের কারণে এ বছরও ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে হবে না তরুণ-তরুণীদের জলকেলিসহ বর্ষবরণের কোনো অনুষ্ঠান। নিজ নিজ জায়গা থেকে উৎসব ছাড়াই নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন তারা।
শৈমেনু মারমা নামে এক তরুণী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তবে মনোবল ঠিক আছে। এবারে সাংগ্রাই উৎসব পালন করতে না পারলে তাতে কী? আগামী বছরে দেশের পরিস্থিতি সব ঠিক থাকলে বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে জমিয়ে মজা করব।’
আয়েশা আক্তার নামে আরেক তরুণী জানান, প্রতিবছর এপ্রিল মাসে বর্ষবরণ উপলক্ষে বান্দরবানের অলিগলি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। তবে এ বছর করোনার কারণে বাংলা নববর্ষ, সাংগ্রাই, বিজুকে ঘিরে কোনো উচ্ছ্বাস নাই।
মিলিপ্রু মারমা নামে এক গায়িকা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারে বাইরে ঘুরাঘুরি না করে নিজ নিজ জায়গা থেকে সারাবিশ্বের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। কারণ সারাবিশ্ব এখন থমকে গেছে।’
উৎসব পালন নিয়ে তিনি জানান, এ বছর উৎসবের তিন দিন তিনি ঘরে বসে অনলাইন লাইভে গান করবেন।
দেশে করোনার প্রকোপ বাড়ায় ১ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত অর্ধশত পর্যটনকেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বান্দরবান জেলা প্রশাসন। দোকানপাট সীমিত পরিসর খোলা এবং জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়।
সারা দেশে করোনা শনাক্তের হার বাড়লেও বান্দরবানে ৪৮ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য থাকায় পরে ৭ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল দুপুর ২টার পর্যন্ত সব ধরনের দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
বান্দরবান ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ ফরিদুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, পর্যটন এলাকা বন্ধ থাকলেও স্বল্প পরিসরে দোকানপাট খুলতে পেরেছেন তারা। খুব বেশি লাভ করতে না পারলেও ব্যবসায়ীরা কিছু পণ্য বিক্রি করতে পেরেছেন। এতেই তারা খুশি।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি থেওয়াং নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুধু সরকার একা করোনা ঠেকালে চলবে না। আমাদের সবাইকে এক হয়ে কোভিডকে ঠেকাতে হবে।
‘এ জন্য আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে বৌদ্ধ বিহারসহ (ক্যাং) প্রত্যেক ঘরে ঘরে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে দেশের জন্য প্রার্থনা করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
বান্দরবান জেলা প্রশাসক জানান, লকডাউন কার্যকরে ১৪ এপ্রিল থেকে বান্দরবান শহরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। যারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বের হবেন তাদের জরিমানা করা হবে। প্রয়োজনে কারাদণ্ড দেয়া হবে।