বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সালথায় সহিংসতা: ক্ষয়ক্ষতি তিন কোটি টাকা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১১ এপ্রিল, ২০২১ ২২:৪৮

গ্রেপ্তার আতঙ্কে উপজেলার অন্তত ৭০টি গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। ঘটনায় জড়িত অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার ঘটনায় জড়িত নন এমন অনেকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। 

ফরিদপুরের সালথায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্তত তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এদিকে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে উপজেলার অন্তত ৭০টি গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। ঘটনায় জড়িত অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার ঘটনায় জড়িত নন এমন অনেকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

রোববার সকালে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন সালথা ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম মোল্লা। তিনি বলেন, প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, সালথার সহিংসতার ঘটনায় দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একটি কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলীকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন জমা দিতে আরও দুই দিন সময় লাগবে।

গ্রেপ্তার আরও ১০

সহিংসতার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেন, সালথার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জামাল পাশা বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত আদালতে পাঠানো হয়েছে ৫৮ জনকে। এর মধ্যে ৪৮ জনকে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সালথা থানায় মোট পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা হিসেবে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় করোনার বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন দেখতে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি ফুকরা বাজারে যান। সেখানে তার গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তি স্থানীয় এক ব্যক্তির কোমরে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এ ঘটনায় সেখানে মানুষের ভিড় জমে যায়। তখন মারুফা সুলতানা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা এসআই মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এতে তার মাথা ফেটে যায়।

পরে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়লে হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পরে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ এবং র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন ও মিরান মোল্যা নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

৭০ গ্রাম পুরুষশূন্য

সহিংসতার পর সালথা উপজেলার ১০৭টি গ্রামের মধ্যে অন্তত ৭০টি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়ন, সোনাপুর ইউনিয়ন, ভাওয়াল ইউনিয়ন ও গট্টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম এখন পুরুষশূন্য।

ফলে মাঠে থাকা হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। মাঠেই ফসলগুলো নষ্ট হতে শুরু করেছে।

রোববার সকালে সালথা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের নারীরা পেঁয়াজ, পাটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ বাজার করতে এসেছেন।

হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা সালমা বেগম বলেন, ‘বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। ওই ঘটনার পর থেকেই ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে সবাই। তাই বাড়িতে যেসব পেঁয়াজ ছিল সেগুলো বিক্রি করতে এসেছি। বিক্রি করে যে টাকা পাব, তাই দিয়ে বাজার সদাই করব আর ঋণের কিস্তি দিব।’

মারুফা নামে আরেক গৃহবধু বলেন, ‘ক্ষেতের ফসল ওঠানোর সময় এখন। পুরুষ মানুষ বাড়িতে না থাকায় মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারছি না।’

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তাদের আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলে কয়েক দিনের জন্য বিভিন্ন গ্রামে এ জাতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দ্রুতই এ অবস্থা কেটে যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর