বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে সুইপার, তদন্তে কমিটি

  •    
  • ১১ এপ্রিল, ২০২১ ১২:৫০

নমুনা সংগ্রহে গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিউজবাংলা খোঁজখবর নিয়ে জেনেছে, হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে অদক্ষ লোক দিয়ে। এই কাজ সাধারণত ডোম করে থাকেন। তবে হাসপাতালে এই পোস্টে কোনো লোক নাই। রানা হরিজন নামে এক সুইপার সংগ্রহ করছেন নমুনা।

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে মানবদেহের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) এর নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ বলছে, এতে মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তে দেখা দিচ্ছে বিভ্রান্তি। বিঘ্নিত হচ্ছে মামলার তদন্ত।

গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিউজবাংলা খোঁজখবর নিয়ে জেনেছে, হাসপাতালে অদক্ষ লোক দিয়ে সংগ্রহ করা হচ্ছে নমুনা। এই কাজ সাধারণত ডোম করে থাকেন। তবে হাসপাতালে এই পোস্টে কোনো লোক নাই।

রানা হরিজন নামে এক সুইপার সংগ্রহ করছেন নমুনা। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, সুইপার হলেও রানা তার বাবার কাছ থেকে ডোমের কাজ শিখেছেন।

হাসপাতালটিতে ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে গাফিলতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে সদর, উল্লাপাড়া ও বেলকুচি থানা পুলিশ। এতে বলা হয়েছে, অপঘাতে মারা যাওয়া চারটি মরদেহ পাঠানো হয় ওই হাসপাতালে।মরদেহ শনাক্তের জন্য সেখান থেকে নমুনাগুলো পাঠানো হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে, যা বর্তমানে ডিএনএ ব্যাংক নামে পরিচিত। সেখান থেকে আসা প্রতিবেদনের সঙ্গে মরদেহের কোনো মিল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ করেন সেখানকার এক সুইপার।

সদর থানা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের অক্টোবরে যমুনা নদী থেকে লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মরদেহ শনাক্তে ডিএনএর নমুনা সংরক্ষণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে পুলিশ।

সংরক্ষণ করা নমুনা সিআইডির ডিএনএ ব্যাংকে পাঠানো হলে যে রিপোর্ট আসে, তাতে উল্লেখ করা হয় মরদেহটি এক নারীর। অথচ মামলা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র এবং সংগ্রহ করা আলামতে মরদেহটি পুরুষের বলে উল্লেখ করা।

এ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিলে একাধিকবার ডিএনএ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবারই তা নারীর বলে রিপোর্টে আসে। এ বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে উল্লাপাড়া থানাতেও। গেল বছরের ডিসেম্বরে ফুলজোর নদী থেকে উদ্ধার করা হয় একটি মরদেহ। সুরতহাল প্রতিবদনে এটিকে পুরুষ বলে উল্লেখ করা হয়। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর তা পাঠানো হয় ঢাকায়।

সিআইডির ডিএনএ ব্যাংকে একাধিকবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবারই সেটি এক নবজাতক কন্যা সন্তানের বলে রিপোর্ট আসে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের ১১ জুলাই সরাবিল এলাকা থেকে একটি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পোশাক ও অন্যান্য আলামত দেখে তা একটি পুরুষের বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয় হাসপাতালে। এর মধ্যে সলঙ্গা থানার চরগোজা গ্রামের গৃহবধূ সেলিনা খাতুন মরদেহটি তার স্বামীর বলে দাবি করেন। ’

ওসি জানান, বিষয়টি নিশ্চিত হতে মরদেহের নমুনা পাঠানো হয় ঢাকায়। একই সঙ্গে পাঠানো হয় ওই নারীর সাত বছরের জমজ দুই ছেলের নমুনাও। রিপোর্টে বলা হয় মরদেহটি এক নারীর।

ওসি দীপক জানান, আবারও ডিএনএ নমুনা ঢাকায় পাঠানোর জন্য তিনি জেনারেল হাসপাতালে যোগাযোগ করলে জানানো হয় সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। পুলিশ বাধ্য হয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে কবর থেকে ওই মরদেহ তুলে আবার ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা নিউজবাংলাকে জানান, গত বছরের ১ জুলাই মৃত এক কিশোরীকে নিজের সন্তান দাবি করে থানায় লিখিত দেন লালচান শেখ ও পারভিন খাতুন দম্পতি। বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুলিশ মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সেইসঙ্গে লালচান ও পারভিনেরও নমুনাও পাঠাতে বলা হয়। প্রথম দফায় পাওয়া রিপোর্ট দেখা যায়, মরদেহটি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির।

পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ নিহত কিশোরীর মাথার খুলি, পাঁজরের হাড়, দাঁত ও চুল কবর থেকে সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠায়। একইসঙ্গে লালচান ও পারভিনের ডিএনএ নতুন করে সংগ্রহ করে পাঠানো হয়। কিন্তু এই দম্পতির নমুনা সঠিকভাবে সংগ্রহ হয়নি বলে ফেরত পাঠানো হয়। এসব কারণে এই ঘটনার তদন্তকাজে দেরি হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ ওসি।

এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, মরদেহ থেকে ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে সেখানকার সুইপার রানা হরিজন।

কথা হয় তার সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ডোম নাই দেখে আমাকে ডোমের কাজ করতে হয়, কিন্তু বেতন পাই সুইপারেরই। ডাক্তাররা কখনই মরদেহ স্পর্শ করেন না। আমাকেই সব করতে হয়। তাই ভুল হলেও হতে পারে।’

হরিজনের অভিযোগ স্বীকার করেছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ডোমের পদ থাকলেও কোনো পোস্টিং নেই। ডোমের জন্য একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হলেও পদটি এখনও খালি পড়ে আছে। এ কারণে সুইপারকে দিয়ে ডোমের কাজ চালাতে হয়।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলামও বলেন ডোমের কাজ সুইপারকে দিয়ে বাধ্য হয়েই চালাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘রানা হরিজনের ভুল হওয়ার কথা না। কারণ সুইপার হলেও বাবার কাছ থেকে সে ডোমের কাজ শিখেছে। তার বাবা এখানে ডোম ছিলেন। ডিএনএ নমুনা নিয়ে কোথায় গলদ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে আরএমওসহ তিনজন সিনিয়র ডাক্তারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে আমাকে জানাবে। তখন আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর