সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় একজন স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি স্কুলে যান না, ক্লাস নেন না, অথচ আট বছর ধরে নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।
ব্যবসার কাজে তিনি ঢাকায় অবস্থান করলেও রহস্যজনকভাবে হাজিরা খাতায় থাকে তার স্বাক্ষর।
ঘটনাটি কৈজুরি ইউনিয়নের চরকৈজুরি গ্রামের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের। সেখানে অভিযুক্ত স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দীর্ঘ আট বছর স্কুল না করেই নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। তিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজটির সভাপতি ও কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের ভাই। তাদের আরেক ভাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক।
জাহাঙ্গীর ঢাকার মিরপুর-১ এলাকায় ব্যবসা করেন। আর স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক পদে নাম লিখে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। কাগজকলমে হাজিরা ঠিক থাকলেও তিনি কোনো দিন স্কুলে উপস্থিত থাকেন না। ক্লাস রুটিনে তার নামও নেই।
স্কুলশিক্ষকের অনিয়ম নিয়ে কৈজুরি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হারুনার রশিদ সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা, শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদ হোসেন ও শাহজাদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হন। তারা উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনেন।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা প্রাথমিক তদন্ত। এ বিষয়ে আরও তদন্ত প্রয়োজন। তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অভিযোগকারী মো. হারুনার রশিদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হোসেন জীবনে কখনও বিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রদের ক্লাস নেননি। ক্লাস রুটিনে তার নামও নেই। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ তার বড় ভাই আব্দুল খালেক। আর সভাপতি আপন সেজো ভাই সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া তার মেজো ভাই আব্দুল মালেক একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’
অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঢাকার ব্যবসা আমার নয়, চতুর্থ ভাই মাওলানা মোস্তফা কামালের। তিনি পূর্ব চরকৈজুরি নতুনপাড়া মোশারফিয়া কওমিয়া মাদ্রাসার সুপার। আমি মাঝেমধ্যে ঢাকায় গিয়ে ব্যবসা দেখাশোনা করি।
‘চাকরির পাশাপাশি অনেকেই তো ব্যবসা করেন। আমি করলে দোষ কোথায়। আমার ভাইদের সঙ্গে অভিযোগকারীর পূর্ববিরোধ আছে। সে কারণে তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ করেছেন।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। তাই আগে কিছু বলা যাবে না।