দুই সপ্তাহ ধরে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করছেন শানু বেগম। নিজেকে ‘জীবিত করে’ তোলার চেষ্টা করছেন তিনি। কেননা বরিশালের মুলাদী উপজেলার ৬৫ বছরের এ বৃদ্ধা সরকারি নথিতে ‘মৃত’।
তিনি আশ্বাস পেয়েছেন বটে। কিন্তু নথিপত্রে ‘জীবিত’ হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মার্চ মাসের শেষ দিকে মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বিধবা ভাতা বিষয়ে খোঁজ নিতে যান শানু বেগম। সেখানে তার নামধাম না থাকায় খোঁজ নিতে স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে বলা হয় তাকে। উপজেলা নির্বাচন অফিসে যাওয়ার পর শানু বেগম জানতে পারেন, কাগজপত্রে তাকে ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে। তবে কীভাবে জীবিত থেকেও ‘মৃত’ হলেন এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা তাকে কেউ দিতে পারেনি।
শানু বেগম জানান, বছর খানেক আগে থেকে তিনি বিধবা ভাতা বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ তার পরিচিতদের সবাই ঠিকঠাক মতো ভাতা পাচ্ছে। কেন তিনি পাচ্ছেন না, জানতে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এবং সেখান থেকে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে যান।
শানু বেগম জানান, কাগজপত্রে ‘মৃত’ হওয়া আসলেই দুঃখজনক। তথ্যের ভুলের কারণে সরকারি সব সুবিধা থেকে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। মেয়েদের কোনোভাবে বিয়ে দিতে পারলেও তার দুই ছেলে বেকার। এই ভাতা অনেক উপকারে আসে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার অসহায় বিধবাদের মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয়, যা প্রতি তিন মাস পরপর বিতরণ হয়। চলতি অর্থবছর ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৯ লাখ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মন্টু বিশ্বাস জানান, তিনি বিষয়টি জানেন এবং সমস্যা সমাধানে উপজেলা নির্বাচন অফিস ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় তথ্য সংগ্রহকারী চরকমিশনার বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজাম উদ্দিন ওই নারীকে মৃত উল্লেখ করেন। তবে নিজাম উদ্দিন দাবি করেছেন, হালনাগাদ কার্যক্রমের আগেই শানু বেগম ভোটার তালিকায় মৃত ছিলেন আর সেটাই তিনি হালনাগাদে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শওকত আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নুরুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানিনা। এমন হয়ে থাকলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত দিতে হবে। আর তাতে এই সমস্যার সমাধান হবে।
বরিশাল জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, যিনি জীবিত, তাকে মৃত হিসেবে কীভাবে দেখানো হলো? বিষয়টি অমানবিক এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিৎ। শানু বেগমের সমস্যা দ্রুত সমাধানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।