ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের কর্মীদের ভয়াবহ তাণ্ডবের ঘটনায় মিথ্যাচার করায় ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির নেতাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। সেই সঙ্গে তাণ্ডবের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায় জেলা ছাত্রলীগ নেতারা এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন।
তিনি বলেন, ‘২৬ মার্চ দেশবাসী যখন মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছিল, সেদিন বিকেল তিনটার পর থেকে বিনা উসকানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় হেফাজত সমর্থিত মাদ্রাসার ছাত্ররা।’
তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের ম্যুরাল, সার্কিট হাউজ, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্যাম্পাস এবং শহরজুড়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত বিলবোর্ড ভাঙচুর করে শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
‘পরদিন বিকেলে হেফাজতের তাণ্ডবের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল শহরের টি এ রোড অতিক্রম করার সময় মাদ্রাসার ছাত্ররা টি এ রোডের ঘোড়াপট্টি ব্রিজের গোঁড়ায় প্রতিবাদ মিছিলে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
‘একপর্যায়ে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার মাইক থেকে ‘হাইয়া আলাল জিহাদ’ বলে এলাকাবাসীকে ঘর থেকে বের হয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জবাই করার আহ্বান জানালে মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা মিলে টি এ রোডে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।’
২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের হরতাল চলাকালে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জামাত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন ২৬ মার্চ। এর প্রতিবাদ করে আসছিল হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো। এর অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া তাণ্ডব চালায় হেফাজতের কর্মীরা। ২৬ থেকে ২৮ মার্চ তিন দিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হন।
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘তাণ্ডবের পর থেকেই হেফাজত নেতারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন। গত ৫ এপ্রিল হেফাজত নেতারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডবে হেফাজতের কেউ জড়িত না। আমরা তাদের (হেফাজত) এই বক্তব্যকে মিথ্যাচার ও জঘন্য অপরাজনীতি বলে মনে করি। তাদের এই বক্তব্য ধর্মপ্রাণ মানুষকে মর্মাহত করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা জুবায়ের মাহমুদ খান শ্রাবন, তামাচ্ছুম অনিক, আবদুল আজিজ অনিক, সাকিল ইসলাম তানিম, শেখ মঞ্জুরে মওলা, রুহুল আমিন আফ্রিদী ও সাফাওয়ান আহমেদসহ জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী।