চাঁদপুরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রকৃত জেলেদের মাঝে ভ্যান বিতরণ না করে অপেশাদার জেলেদের মাঝে বিতরণের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বুধবার ভ্যান বিতরণ অনুষ্ঠান কার্যক্রম স্থগিত করে ঘটনা তদন্তে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
বুধবার দুপুরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিকল্প কর্মসংস্থানের সহায়তা হিসেবে ২০ জন জেলের মাঝে ভ্যানগাড়ি বিতরণের আয়োজন করা হয়।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। কিন্তু এ সময় ভ্যানগাড়িগুলো প্রকৃত জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে না-বলে অভিযোগ তোলেন সেখানে সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত অনেক জেলে।
এক পর্যায়ে সহায়তা পাওয়া জেলেদের নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় এই কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। একইসঙ্গে এই ঘটনা তদন্ত করার জন্য চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজকে নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বুধবার জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের অংশ হিসেবে ২০ জন জেলের মাঝে ভ্যানগাড়ি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা মৎস্য অফিস। কিন্তু সহায়তাপ্রাপ্তরা পেশাদার জেলে নয় বলে অভিযোগ উঠলে এই কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যাদেরকে ইতিমধ্যে ভ্যান বিতরণ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে ভ্যান ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাটি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো অপেশাদার জেলেকে এই সহায়তা দেয়া হবে না।
জেলা প্রশাসক বলেন, ভ্যান বিতরণ কার্যক্রমে কোনো ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেলে, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সরকারি প্রনোদনার ভ্যানগাড়ি নিতে আসা সদর উপজেলার বাসিন্দা মো. মোখলেছ গাজী বলেন, আমি এখন আর মাছ ধরার কাজ করি না। বর্তমানে শহরে রিকশা চালিয়ে আয় করি। বেশ কয়েক বছর আগে নদীতে মাছ ধরতাম। আমার নিবন্ধিত জেলেকার্ড রয়েছে।
শহরের পুরানবাজার এলাকার আরেক বাসিন্দা আবদুল গফুর শেখ বলেন, আমি ২০/২৫ বছর আগে নদীতে মাছ ধরতাম। কয়েক বছর আগে এলাকায় দোকান দিয়েছিলাম। সেখানেও বাকি পড়ে যাওয়ায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে আমি বেকার অবস্থায় রয়েছি। তবে এভাবে ভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িতদের ভ্যানগাড়ি দেওয়া উচিত নয় বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে জেলে হিসেবে সরকারের তালিকায় নিবন্ধিত আছেন বলে জানান তিনি।
শহরের ইচলী ঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আমি শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে মাছ বিক্রি করি। আমার জেলে কার্ড রয়েছে। তবে নদীতে কখনোই ইলিশ মাছ ধরিনি।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক দেওয়ান বলেন, আমরা প্রকৃত জেলেদেরকে সব ধরনের সরকারি সহায়তা প্রদানের জন্য বার বার অনুরোধ জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। বুধবার যাদের মাঝে ভ্যান গাড়ি বিতরণ করা হয়েছে, তাদের অনেকেই প্রকৃত জেলে না। আমরা প্রকৃত জেলেদের তালিকা তৈরির জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকি বলেন, আগের তালিকা অনুযায়ী জেলেদের মাঝে ভ্যান বিতরণের তালিকা করা হয়। এটি হালনাগাদ তালিকা নয়। তালিকায় কোনো ভুয়া জেলের নাম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৎস্য কর্মকর্তা জানান, ইলিশ অভয়াশ্রম কর্মসূচির আওতায় ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষাকল্পে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
চাঁদপুরে ৫১ হাজার ১৯০ জন জেলের মধ্যে ৪০ হাজার ৫ জনকে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে ৪ মাস ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল প্রদান করা হয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ বলেন, জেলেদের ভ্যান বিতরণের বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়া হবে।