বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেরপুরেও গরম বাতাসে নষ্ট হয়েছে ধান

  •    
  • ৭ এপ্রিল, ২০২১ ২২:২৯

প্রাথমিকভাবে ১৮৫ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দল এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছেন।  

শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় ঝড়ের পর থেকে মরে যাচ্ছে ক্ষেতের বোরো ধান। কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাসের কারণেই বোরো ধানের এ ক্ষতি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহিত কুমার দেব জানান, এ বছর ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাস হওয়ায় জেলার সদর, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ি, নকলা ও শ্রীবরদি উপজেলায় ধানের ক্ষতি হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ১৮৫ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দল এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘উপজেলায় চলতি বছর ১৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। রোববারের ঝড়ের পরের গরম বাতাসে উপজেলার নলকুড়া, রাংটিয়া, ডেফলাই, কাংশা, নওকুচি, গান্ধীগাঁও, জামতলী, হালচাটি, বগাডুবি এলাকার ৫০ হেক্টর জমির উঠতি বোরো ধান, যেগুলোতে শীষ এসেছে সেগুলো চিটায় পরিণত হয়ে সাদা হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সেদিন এমন গরম বাতাস উঠছিল যে, বাইরে থাকা যায়নি, ঘরেও খালি গায়ে থাকতে কষ্ট হইছে। প্রথমে আমরা বুঝতে পারি নাই যে আমাগো ধানের ক্ষতি হইছে। কিন্তু এখন বুঝতাছি, এই গরম বাতাসে আমাগো ধান সব শেষ। এখন আমরা সারা বছর কী খামু?’

কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমরা ঋণ কইরা ধান চাষ করছি। এহন কি করুম, কি খামু? ঋণের টেহা মিটামু কেমনে? আমগো দেকবো কেডা?’

ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম বলেন, ‘গরম বাতাসে ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি।’

মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত ধান ক্ষেত পরিদর্শন শেষে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কীটতত্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পান্না আলী বলেছিলেন, ‘উপজেলা কৃষি বিভাগের আহ্বানেই আমরা পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি। পর্যবেক্ষণ শেষে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানেছি, ঝড়ের সঙ্গে ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম বাতাস হওয়ার কারণেই ধানের শীষগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।’

তার সঙ্গে ছিলেন ব্রি-এর উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী শিরিন আক্তার জাহান, উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হীরেন্দ্র নাথ বর্মণ।

শেরপুরের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জের ইটনা এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানীতে রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টার মধ্যে হঠাৎ করে গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শত শত হেক্টর জমির ফসল পুড়ে যায়।

স্থানীয়রা এটিকে ‘লু হাওয়া’ বলে অভিহিত করলেও আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, দেশে লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার কোনো নজির এখন পর্যন্ত নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়ায় লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা নয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে এখন যে তাপমাত্রা রয়েছে, তাতে লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই।তিনি বলেন, লু হাওয়া বা গরম বাতাস বয়ে যেতে হলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হতে হবে। দেশে এখন পর্যন্ত লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এগুলো হলে ছোট এলাকায় হয়, স্থানীয়ভাবে। তবে তাপমাত্রা বেশি থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আবার গত দুইদিন ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। তাই এটা সম্ভব না।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, রোববার গোপালগঞ্জের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এমন ঘটনা তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ জানায়নি। কিশোরগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ দুই এলাকাতেই গতকাল বাতাস ছিল।

বাংলাদেশে এমন ঘটনা এর আগে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে এখনও এমন পাইনি। তবে দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া বা ক্যালিফোর্নিয়াতে এমন শুনে থাকি।’

এ বিভাগের আরো খবর