‘আমি টাকা নেই নাই এ কথা বলছি। হাতে পায়ে ধরছি মালিকের। তখন সে বলে- ঘড়ির কাঁটা যতক্ষণ ঘুরবে, ততক্ষণ তোর মাইর থামবে না। জীবন বাঁচাতে আমি বলেছি, হ টাকা নিছি।’
গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নিউজবাংলাকে এই কথাগুলো বলছিলেন রেস্তোরাঁকর্মী আশরাফুল ইসলাম।
রাজধানীর পশ্চিম ধানমন্ডির মিতালী রোডের ‘কিডস্ জি রেস্টুরেন্ট’ নামে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন আশরাফুল। টাকা চুরির অভিযোগে তার শরীরে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা ও মারধর করেছেন ওই রেস্তোরাঁর মালিক রুহিত মিয়া।
আশরাফুলের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামে। নির্যাতনের ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে শরীরে ক্ষত নিয়ে আশরাফুল নিজ বাড়িতে ফেরেন। বুধবার সকালে তাকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আশরাফুল ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমাকে রুমের ভিতরে আটকায়া স্কেল আর লাঠি দিয়া বাড়াইছে। প্লাস নখের মধ্যে বাজাইয়া (আটকিয়ে) টান দিছে। এরপর গরম ছ্যানি (খুন্তি) দিয়া ছ্যাঁকা দিছে। পরে বলে, ‘বল তুই টাকা নিছিস’।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘তখন সে জোর করে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিছে। এস্টেটম্যান্ট নিছে; মাইরের ভিডিও করে নাই, খালি স্বীকার করার কথাটা ভিডিও করসে । এরপর বলে, ‘বাড়িতে যাইয়া কোনো প্রকার সমস্যা করলে তোমার ভিডিওটা ভাইরাল করে দেব’।’’
কীভাবে, কার মাধ্যমে ও কতদিন ধরে ওই রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন-এ প্রশ্নের উত্তরে আশরাফুল বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশের রাকিব নামে একজন কাজ দিছিল। আমি মাত্র চারদিন হইছে সেখানে ঢুকছি (১ এপ্রিল থেকে)। আমি রুম ঝাড়ু দিতাম, একটু মোছা দিতাম আর ছাদের ফুল গাছে পানি দিতাম। ওনার (রুহিত) দুটা ভাই আছে তাদের খাবারের পার্সেল আনি দিতাম। এগুলোই করতাম।’
আশরাফুল জানান, গত ৫ এপ্রিল রেস্তোরাঁ থেকে আট হাজার টাকা চুরির অপবাদ দেয়া হয় তাকে। এ নিয়ে চাপ দেয়া হলে বিষয়টি অস্বীকার করেন আশরাফুল। পরে তাকে মারধর করা হয়। এরপর রেস্তোরাঁর মালিক রুহিত তার সহযোগী মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে প্লাস দিয়ে তার হাতের নখ তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন।
তিনি আরও জানান, আট হাজার টাকা আশরাফুল বাড়িতে ফোন করে আনিয়ে নিয়ে রুহিতকে দিলে তারপর তিনি ছাড়া পান।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের চিতিৎসা কর্মকর্তা সুজন পাল বলেন, ‘রোগীর পিঠে ও হাতে গরম ছ্যাঁকার একাধিক চিহ্ন রয়েছে। সেরে উঠতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগতে পারে।’
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান বলেন, ‘যেহেতু ঘটনাস্থল ঢাকায়, তাই মামলা সেখানকার থানায় অথবা কোর্টে করতে হবে।’
ওসি আরও বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর হাসপাতালে আশরাফুলের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তার পরিবারকে সব ধরনের আইনি পরামর্শও দেয়া হয়েছে।’