বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১১ হাজার ভিক্ষুক, পুনর্বাসন মাত্র ১৫০ জনের

  •    
  • ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০৮:২৬

ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে চায় রংপুরের প্রশাসন। কিন্তু ভিক্ষুকের সংখ্যার তুলনায় নগণ্য তাদের উদ্যোগ। সামাজিক নিরাপত্তাজালের অংশ হিসেবে যেসব ভাতা চালু আছে, তার পরিমাণ খুবই কম। অল্প কিছু সামাজিক উদ্যোগ দেখা যায়।

‘স্বামী মারা গেছে চার বছর। ঘরদুয়োর নাই, মৃগী বেরাম (অসুখ) আছে হামার। প্রতিদিন দেড় শ, দুই শ টাকা হয়, তা দিয়ে ওষুধ খাই। আর যে টাকা থাকে তা দিয়ে তিন বেলা খাই।’

কথাগুলো বলছিলেন ফজিলা বেগম। তিনি রংপুরে ভিক্ষা করে জীবন চালান।

তার মতো এমন অনেক ভিক্ষুক আছেন রংপুরে। তাদের পুনর্বাসনে সরকারি উদ্যোগ নেয়া হলেও সেই কাজের তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি।

২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবস ও সমাজসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল মানুষদের সরকারের তরফ থেকে বিনা খরচে পুনর্বাসন করা হবে বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

রংপুর সমাজসেবা কার্যালয় ২০১৮ সালে এক জরিপ করে। আট উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১১ হাজার ২৭৬ জন ভিক্ষুক পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৭৩ জন ভিক্ষুক আছেন। বাকি উপজেলাগুলোয় ভিক্ষুকের সংখ্যা এক থেকে দেড় হাজারের মধ্যে।

২০২০ সালের ১০ আগস্ট ১০০ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেয় রংপুর জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া করোনাকালে ১০০ জনকে ১ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়। সমাজসেবা কার্যালয় থেকে গত ৩ মার্চ ৫০ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের আওতায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দেয়া হয়েছে। বাকিদের এখনও কোনো সরকারি সহায়তা দেয়া হয়নি।

পীরগঞ্জ উপজেলায় ২ হাজার ৭৩ জন ভিক্ষুক আছেন

রংপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল মতিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখসহ মোট ১৫ লাখ টাকা ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে কয়েকজনকে গাভি আর বাকি সবাইকে অটোরিকশা কিনে দেয়া হয়েছে। তারা যেন আবার ভিক্ষাবৃত্তিতে না জড়ায় সে জন্য প্রত্যেক উপজেলায় নজরদারি রাখতে একজন করে সমাজকর্মী কাজ করছে।’

ভিক্ষুকদের অভিযোগ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ কোনো ভাতাই তারা পান না। তাই তিন বেলার খাবার জোগাড় করতে বাধ্য হয়ে তাদের মানুষের কাছে হাত পাততে হয়।

ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত জয়মতি বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কোনো বাচ্চাকাচ্চা নাই। স্বামী মারা যাবার পর মানষের (মানুষের) বাড়িত থাকি। কাইও (কেউ) কোনো দিন সহযোগিতা করে নাই। একনা (একটু) সহযোগিতা করলে কি ভিক করি খাবার নাগে (লাগে)? আমি কাজকাম করবের পাই না। পুঁজি নাই, পইসে নাই। থাকলে অন্য কিছু কললেম হয়।’

পীরগাছার রামচদ্র পাড়ার ছকিনা বেগম বলেন, ‘আমার একটা মেয়ে ছিল, বিয়ে দিছি। কোনো ভাতা, টাকা পাই নাই, নেম্বর (মেম্বার) চেয়ারম্যানের কাছে গিছনুং (গিয়েছিলাম) কেউ কিছু দেয় নাই। ভিক করি খাই। বেশি হয় না। যেমন হাঁটা তেমন পাই। এলা (অত) হাঁটপের (হাঁটতে) পাই না, কামাইও কম।’

পীরগাছার চৌধুরানী বাজারের বছিরন বেওয়া বলেন, ‘বয়স্ক ভাতার জন্যে নেম্বর (মেম্বার) টাকা চাইচে। দিবের পাও নাই। এই জন্যে মোক ভাতা দেয় নাই। ভাতা দিলে হামার ভিক্ষে করার নাগিল নে হয়।’

চৌধুরানী বাজারের ব্যবসায়ীরা ভিক্ষুকদের জন্য একটি উদ্যোগ নিয়েছেন।

বাজারের ব্যবসায়ী আবু রায়হান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে প্রতিদিন কিছু মহিলা ভিক্ষুক বাজারে আসত। পরে মাস দুয়েক আগে আমরা তাদের ডেকে বললাম, “প্রতিদিন এখানে কষ্ট করে আসার দরকার নেই। প্রতি শনিবার আপনারা আসেন, আমরা সবাই মিলে টাকা তুলে আপনাদের দিব, আপনারা ভাগ করে নিবেন।” এরপর থেকে তারা প্রতি শনিবার এখানে আসেন। আমরা প্রতিজন ব্যবসায়ী এক শ করে টাকা দিই, তারা ভাগ করে নেন।’

ভিক্ষুকদের অভিযোগ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ কোনো ভাতাই তারা পান না

তিনি আরও বলেন, ‘এই সমস্যা তো অনেক বড় নয়। সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। সরকারের অনেক সুযোগ আছে সহযোগিতা করার। এরা কেউ ইচ্ছা করে ভিক্ষা করে না। এদের প্রতি একটু সুদৃষ্টি দিলে আর্থিকভাবে হেল্প করলে তারা আর এভাবে হাত পাতবে না বলে আমি মনে করি। তাদের হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল দিলে তারা সেগুলো লালনপালন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।’

শামছুল আলম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যানরা চাইলে এদের হেল্প করতে পারবে। তাদের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার কার্ড বানিয়ে দিয়ে যদি বলা যায়, তোমরা ভিক্ষা করবা না, তাহলে কিন্তু তারা এই পেশা বাদ দিতে পারবে।’

পীরগাছার কৈকুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম লেবু মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের কাছে একটা লিস্ট আছে। আমরা লিস্ট নিয়ে কাজ করছি। তা ছাড়া সরকারিভাবে যে বরাদ্দ, তা দিয়ে একজন মানুষের সংসার চলে না। তারা (ভিক্ষুক) প্রতিদিন তিন থেকে চার শ টাকা পর্যন্ত আয় করে, সে কারণেও অনেকে ভিক্ষা করে। আমরা চেষ্টা করছি ভিক্ষুক মুক্ত ইউনিয়ন করতে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জুর অভিযোগ, ‘ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল। জেলায় নির্দেশনা আসার পরও প্রশাসনের অনীহার কারণে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়নি বা হচ্ছে না বলে আমি মনে করি।

‘আমি মনে করি, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে সমাজের প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে। কারণ পথে পথে ভিক্ষুক থাকলে এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ এবং এই উদ্যোগ যেন বাস্তবায়নযোগ্য হয়।’

রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত অনুদান এবং সরকারি অনুদান মিলিয়ে এরই মধ্যে এক শ জনের পুনর্বাসন করেছি। আরও এক শ জনকে পুনর্বাসন করতে উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।’

এ বিভাগের আরো খবর