দোকানের একটি ঝাঁপ, সেটিও আধখোলা। সামনে দাঁড়িয়ে দোকানি, ভেতরে কর্মচারী। দোকানি পথচারীদের ডেকে জানতে চাইছেন, কিছু লাগবে কি না। আর খেয়াল রাখছেন, হঠাৎ করে প্রশাসন বা পুলিশের কেউ এসে পড়ে কি না।
দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ হাজির জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মুহূর্তে ঝাঁপ নামিয়ে দোকান বন্ধ। ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাবার পর একই প্রক্রিয়ায় ফের চালু দোকান।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনে এভাবেই পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে ‘চোর-পুলিশ’ খেলছেন বরগুনা শহরের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধ থাকায় তারা সবাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। দোকান বন্ধ থাকলেও মাস শেষে কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিতেই হয়। এ কারণেই তারা দোকান খোলা রাখছেন।
সোমবার দেশজুড়ে লকডাউন শুরুর আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, খাবার ও ওষুধ ছাড়া সব দোকান বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা প্রশাসন। শহরে মাইকিংও করা হয়। তবে অধিকাংশ বস্ত্র, জুতা, কসমেটিকস, হার্ডওয়্যার ও স্টেশনারি ব্যবসায়ীদের লকডাউনের নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি।
শহরের জুতো ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, রোজার ঈদ সামনে রেখে প্রায় কোটি টাকার জুতো এনেছেন। প্রতিদিন তার খরচ ১২ হাজার টাকা। এমন অবস্থায় তার জন্য দোকান বন্ধ রাখা সম্ভব না।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট সময় দোকান খোলা রাখতে চাই। আশা করি সরকার আমাদের কষ্ট বুঝবে।’
গার্মেন্টস পণ্য বিক্রেতা আল-আমিন বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু যখন নিজের পেটে ক্ষুধা, তখন আইন মানতে কষ্ট হয়ে যায়।’
বরগুনা জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। দোকানিদেরও পরিস্থিতি বুঝতে হবে। সবকিছু যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, এ নিয়ে আমরা আলোচনা করে সমাধান বের করার চেষ্টা করব।’
লকডাউনের নির্দেশনা ব্যবসায়ীরা না মানলেও বরগুনা থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন এবং লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সবজি ও মাছের বাজার জিলাস্কুল মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। লকডাউন কার্যকরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর শহরে জমায়েত রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
তবে শহরবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানায় খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় বরগুনায় ৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় চারজন করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জন।