বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শীতলক্ষ্যা নদীর পারে ছিল শুধু হাহাকার

  •    
  • ৬ এপ্রিল, ২০২১ ০১:১৮

কেঁদেছেন ডুবুরি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও। মাঝ নদী থেকে তীরে টেনে আনা লঞ্চের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আটকে পড়ে ছিল অসংখ্য মৃতদেহ। একে একে মৃতদেহগুলো টেনে বের করেছেন তারা।  সেসব মৃতদেহ দেখে চোখ দিয়ে পানি পড়েছে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করতে আসা সেচ্ছাসেবীদেরও।

একেকটি লাশ উদ্ধার করছিলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ও নৌবাহিনীর ডুবুরিরা আর তখন আহাজারি ও আর্তনাদে ভরে উঠেছিল শীতলক্ষ্যার পার।

কেউ বাবা-মাকে হারিয়েছেন। কেউ সন্তানকে হারিয়েছেন। কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে বোনকে হারিয়েছেন। স্বজন হারানো এসব মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে গিয়েছিল পুরো এলাকা।

কেঁদেছেন ডুবুরি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও। মাঝ নদী থেকে তীরে টেনে আনা লঞ্চের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আটকে পড়ে ছিল অসংখ্য মৃতদেহ। একে একে মৃতদেহগুলো টেনে বের করেছেন তারা। সেসব মৃতদেহ দেখে চোখ দিয়ে পানি পড়েছে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করতে আসা সেচ্ছাসেবীদেরও। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।

এই ২৯ জন রোববার সন্ধ্যায় ডুবে যাওয়া এম ভি সাবিত আল হাসান নামে লঞ্চের যাত্রী ছিল। সোমবার দুপুরে লঞ্চটি উদ্ধার করে বিআইডব্লিটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়।

নদীর পারে ছেলে, ছেলেবউ আর নাতির অপেক্ষায় বসে ছিলেন শাহিনুর বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিউজবাংলাকে এই বৃদ্ধা জানান, দুপুরে লঞ্চের ভেতর থেকে ছেলে হাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী তাহমিনার লাশ পাওয়া যায় কিন্তু নাতি আবদুল্লাহর লাশ তখনও পাননি। তাই লাশবাহী গাড়ি এলেও ছেলে ও ছেলেবউর মরদেহ নিয়ে যাননি। অপেক্ষায় ছিলেন নাতির মরদেহের জন্য।

বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নদীতে ভেসে ওঠে শিশু আবদুল্লাহর মরদেহ। পরে ৫ টার দিকে এক সাথে তিনটি মৃতদেহ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বরিশালের গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হন তিনি।

২ বছর বয়সী শিশু আজমীর দাদার সঙ্গে লঞ্চে করে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য মুন্সিগঞ্জে নানির বাড়িতে যাচ্ছিল। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর দাদা সাইফুল ইসলাম আহত অবস্থায় বেঁচে ফিরলেও সঙ্গে আনতে পারেননি নাতিকে।

লঞ্চ ডোবার খবর পেয়ে ছুটে আসেন আজমীরের বাবা সোহান। তাকে রোববার রাত থেকে নদীর পারে একা বসে কাঁদতে দেখা গেছে। সোমবার দুপুরে ছেলে আজমেরীর মৃতদেহের সন্ধান পাওয়ার পর তার আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠে শীতলক্ষ্য নদীর পার।

ছেলের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় সোহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজমীরকে সাজিয়ে গুজিয়ে দিয়েছিলাম। তার মায়ের সঙ্গে দেখা করাতে নানা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল আমার বাবা। আজমীরের যাওয়ার সময়ের শেষ হাসিটা মনে করেই আমি বেঁচে থাকব।’

গলার টনসিলের চিকিৎসা করাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় মেয়ের বাড়িতে এসেছিলেন খাদিজা বেগম (৫০)। চিকিৎসা শেষে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ হয়ে গ্রামের বাড়ি বরিশালের স্বরূপকাঠিতে ফেরার উদ্দেশ্যে সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটিতে ওঠেন তিনি। কিন্তু পথেই সব শেষ হয়ে যায়।

তার মরদেহ সামনে রেখে কাঁদছিলেন মেয়ে নাজনীন। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমার মায় সাঁতার জানে তারপরও বাঁচতে পারলো না। রাক্ষুসে জাহাজ আমার মায়রে ডুবাইয়া মারছে।’

তিনি জানান, তার মায়ের পরনে বোরকা থাকলেও মৃতদেহের শরীরে বোরকা ছিল না। বাঁচার জন্যই হয়তো গায়ের বোরকা খুলে ফেলেছিলেন তিনি।

রোববার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের লঞ্চঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এম ভি সাবিত আল হাসান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি।

সোয়া ৬ টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীতে সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় পৌঁছলে এস কে থ্রি নামে লাইটার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়।

ডুবে যাওয়ার ১৮ ঘন্টা পর লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। পরে এর ভেতর থেকে প্রথমে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ২২ জন ও পরে আরও ২জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যের ও বিআইডব্লিউটিএ ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এসকে থ্রি নামের ওই লাইটার জাহাজটিকে আটক করতে নৌ পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শহিদুল ইসলাম নিউজ বাংলাকে জানান, এখনো এসকে থ্রি নামের লাইটার জাহাজটিকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি। নৌ পুলিশের অভিযান চলছে সেই জাহাজটিকে আটকের জন্য।

নৌ পুলিশের ওসি আরও জানান, ওই জাহাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এ লঞ্চটির ধারণ ক্ষমতা ৬৮ জন বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা।

তিনি জানান, রোবববার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সৈয়দপুরের কয়লাঘাট এলাকায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে একটি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দেয় এই লঞ্চটিকে। এর পর থেকে কয়েক ঘন্টা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লঞ্চটিকে ঠেলে অন্তত ২০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে দেয় এসকে থ্রি লাইটার জাহাজ। এরপর লঞ্চের উপরে উঠিয়ে চলে যায় জাহাজটি। এর মধ্যেই নদীতে ঝাপিয়ে পড়েন কয়েকজন। তবে লঞ্চে থাকা অধিকাংশ মানুষ আটকা পড়েন। তাদের আর বেঁচে ফেরা হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর