ইউনিফর্মে ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের পক্ষে এবং সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় কুষ্টিয়ার পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার ইন সার্ভিস ট্রেইনিং সেন্টার থেকে এএসআই গোলাম রাব্বানীকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম।
তিনি জানান, ‘রাব্বানীকে বরখাস্ত এখন করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খ. মহিদ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, গোলাম রাব্বানী শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেছেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া। একই কথা বলেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোস্তাফিজুর রহমান।
তবে এএসআই রাব্বানীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হবে কি না, এ বিষয়টি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেননি।
সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান নেয়া হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় লোকজনের প্রশ্নের মুখে হেফাজত নেতা তার সঙ্গীনিকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন। তিনি বলেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী, নাম আমেনা তইয়্যেবা; বাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম।
তবে সেই নারী জানিয়েছেন তার নাম জান্নাত আরা, বাবার নাম অলিয়র, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
দুইজনের তথ্যে নানা গরমিলের পর রাতে তিনটি মোবাইল কথোপকথনের অডিও ফেসবুকে ফাঁস হয়। এর একটিতে বোঝা যায় মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে স্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন।
আরেকটি কথোপকথন মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায় মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ে আয়োজন করেছেন।
এরপর মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে ও পরদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তিনি পারিবারিকভাবেই ওই নারীকে বিয়ে করেছেন। ওই নারী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাবেক স্ত্রী।
এসব ঘটনার পর রোববার ইউনিফর্মে ফেসবুক লাইভে আসেন এএসআই রাব্বানী।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা সেখানে (মামুনুলকে অবরুদ্ধ করার পর ঘটনাস্থলে) চিল্লাপাল্লা করে তার কাবিননামা দেখতে চাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, সাংবাদিককে এই অধিকার কে দিয়েছে? … আমি তো পুলিশে চাকরি করি, আমার জানা নাই। ভণ্ডামির একটা সীমা আছে। … মিডিয়ার মাধ্যমে এমন একটা আলেম মানুষকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ধরনের হেনস্তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এই লাইভের পর আলোচনা ওঠে, ইউনিফর্মে একজন পুলিশ সদস্য ব্যক্তিগত মতামত পাবলিক প্ল্যাটফর্মে দিতে পারেন কি না।
সমালোচনার মুখে রোববার রাতেই এএসআই রাব্বানীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে সোমবার সকালে জানান এসপি খাইরুল।