বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বরিশাল কি কোনো মহানগর না পাড়াগাঁ?

  •    
  • ৫ এপ্রিল, ২০২১ ০৮:১০

রাস্তাঘাট বেহাল। খাল ও পুকুরগুলো এখন মরা জলাশয়ে পরিণত হয়েছে; বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। বর্ষায় ডুবে যায় পুরো নগরী। বরিশাল শহরে তিন বছর ধরে নেই কোনো উন্নয়নকাজ। 

বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জের গৃহবধূ প্রা‌প্তি মণ্ডল। অবসরে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য তার প্রিয় জায়গা নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকার কীর্তন‌খোলা নদীর তীর।

তিনি বলেন, আনন্দ নিয়ে ঘুরতে গেলেও বাড়ি ফিরতে হয়ে কোমরে ব্যথা নিয়ে। কারণ, আমানতগঞ্জ ও ত্রিশ গোডাউন সড়ক দুটিই খানাখন্দে বেহাল। রিকশা বা অটোরিকশায় চড়ে ওই সড়কে যাতায়াত করত গেলে ঝাঁকুনিতে কষ্ট হয় তার।

বেহাল সড়কে দুর্ভোগের কথা জানালেন নগরীর পোর্ট রোড এলাকার ব্যবসায়ী ছত্তার সিকদারও।

তিনি বলেন, ‘পোর্ট রোড সড়কের সংস্কার হয় না বহু বছর। ধুলায় অতিষ্ঠ থাকতে হয়। ব্যবসা‌য়িক এলাকা হওয়ায় এখানে অনেক ট্রাক প্রবেশ করে। এই সড়ক খানাখ‌ন্দে পুরোপু‌রি ভরা।’

নগরীর পলাশপু‌রের সাইফুল ইসলাম ও ক‌বি জীবনানন্দ সড়‌কের গৌতম বেপারী তুললেন জলাবদ্ধতার অভিযোগ।

তারা জানালেন, নগরীর জালের মতো বিস্তৃত খাল ও পুকুরগুলো এখন মরা জলাশয়ে পরিণত হয়েছে; বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। বর্ষায় ডুবে যায় পুরো নগরী।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম তো অলরে‌ডি চলে আসছে। সামান্য বৃষ্টি হ‌লেই আমাদের পুরো এলাকা পা‌নির নিচে চলে যায়। রাস্তাঘাট বেহাল। সাই‌কেল নিয়ে চলাও কষ্ট।’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচনের আগে নগরীর এসব সমস্যা সমাধানে মেয়র অনেক আশা-ভরসার কথা শোনান। এখন আসলে কিছুই হচ্ছে না।’

দায়িত্ব নেয়ার তিন বছরেও সিটি মেয়র কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন দেখাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করলেন নগরবাসীর অনেকে।

বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরবাসীকে এসব দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে বেশ কিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু তিন বছরেও কোনো প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ আসেনি। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহের অভিযোগ, ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি প্রকল্প পাচ্ছেন না।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৬ খাল ও ৩০ পুকুর নিয়ে উন্নয়নকাজ শুরু করতে গত জানুয়ারিতে ১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পের নাম ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খালগুলোর পাড় সংরক্ষণসহ পুনরুদ্ধার ও পুনঃখনন’।

সাড়ে তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ৪৬টি খাল পুনঃখননের জন্য বরাদ্দ ধরা হয় ১২১ কোটি টাকা। ১০৯ কিলোমিটার এলাকার খালগুলোর দুই পাড়ের ২৩ কিলোমিটার স্থানে সৌন্দর্য বর্ধনের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঘাটলা, বসার বেঞ্চ, ড্রেন, লাইট, ১৭টি আরসিসি ব্রিজ ও ৩০টি পুকুর সংস্কারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮৭ কোটি টাকা।

প্রকৌশলী বিভাগ জানায়, পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়নি। এর আগে নগর উন্নয়নে আরও দুইটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হলেও সেগুলোও পাস হয়নি।

পরিকল্পনামন্ত্রীর উপস্থিতিতে বরিশাল সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের প্রায় তিন বছর হতে চলছে। অথচ এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো একটি প্রকল্পে অর্থ ছাড় করা হয়নি। কোনো উন্নয়ন বরাদ্দও নেই। এটা ষড়যন্ত্র।

‘সারা দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ বরিশাল বিভাগীয় সদরে তেমন উন্নয়ন নেই। উন্নয়নে বরিশালের মেয়র ব্যর্থ হলে শেখ হাসিনা ব্যর্থ হবেন।’

এদিকে তিন বছরেও কোনো উন্নয়নকাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ।

উদীচী বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, ‘গত ১২ বছরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অবকাঠামোসহ উন্নয়ন নেই এমন এলাকা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। সেই উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না এমন অভিযোগও হয়তো আছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন কাজ চলমান আছে।

‘মোটাদাগে চারিদিকে তাকালেই চোখে পড়বে উন্নয়নকাজ। পদ্মা সেতু, পায়রা সেতু, পায়রা বন্দর, সেনানিবাস, কোস্টগার্ড, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে ভাঙা-বরিশাল-কুয়াকাটা চার লেন সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হবে। শুরু হবে বহুল প্রত্যাশিত রেললাইনের কাজও। এত সম্ভাবনা যখন হাতছানি দিচ্ছে বরিশালকে, তখন সেই বরিশাল শহর উন্নয়নের জন্য বিলাপ করে মরছে। এমনটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সুন্দর নগর বরিশাল দুর্ভোগের নগরীতে রূপ নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীসহ সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা বরিশাল মহানগরটা একটু দেখে যান। এটা কি কোনো মহানগর না কি কোনো প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ? সারা দেশ যখন উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে, সেখানে বরিশাল মহানগর কেন বঞ্চিত হবে? এই বৈষম্য দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘মহানগরের ৯০ ভাগ রাস্তা চলাচলের অনুযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো সড়কে বিটুমিন উঠে গিয়ে ভেতরের মাটি বের হয়ে এসেছে।

‘এমনও সড়ক আছে যেগুলো দেখলে দূর থেকে ডোবার মতো মনে হবে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নেও কোনো প্রকল্প নেই। নেই পানি শোধনাগার চালুর উদ্যোগ। খাল সংরক্ষণ-সংস্কার প্রকল্প ফাইলবন্দী থাকায় একটি ভাগারের নগরীতে রূপ নিচ্ছে এক সময়ের ভেনিস- বরিশাল। দ্রুত এই মহানগরীর সমস্যাগুলো সমাধান করা উচিত।’

সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘প্রকল্প বরাদ্দ না থাকায় উন্নয়নকাজ করা যাচ্ছে না। তবে আসছে একনেক সভায় অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে আশা করছি। প্রকল্পগুলো পাস হলেই কাজ শুরু হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর