বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাহাড়ে হাতি তাড়াতে সৌরবিদ্যুতের তারের বেড়া

  •    
  • ৪ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:০৩

বনবিভাগ বলছে, সোলার ফেন্সিং দিয়ে হাতি প্রতিহত করা হবে, কিন্তু এতে হাতি মারা যাবে না। হাতি থেকে রক্ষায় এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। বাংলাদেশের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সোলার ফেন্সিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে।

কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে দেশে বহুমাত্রিক ব্যবহার রয়েছে সৌর বিদ্যুতের (সোলার প্যানেল)। হাতি থেকে জানমাল রক্ষায়ও বিভিন্ন জায়গায় এটি ব্যবহার করা হয়। এবার পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে বন্যহাতি থেকে রক্ষা পেতে স্থাপন করা হবে সৌরবিদ্যুতের তারের বেড়া (সোলার ফেন্সিং)।

বনবিভাগ বলছে, সোলার ফেন্সিং দিয়ে হাতিকে প্রতিহত করা হবে, কিন্তু তাতে হাতি মারা যাবে না। হাতি থেকে রক্ষায় এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। বাংলাদেশের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সোলার ফেন্সিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কাপ্তাইয়ে হাতির অন্তত পাঁচটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এর মধ্যে কাপ্তাই নেভি গেট, প্রশান্তি পার্ক, জাতীয় উদ্যান দিয়ে বেশির ভাগ হাতি চলাফেরা করে। মূলত ওই সব এলাকায় এই সোলার ফেন্সিং নির্মাণ করা হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যহাতির উপদ্রব কমাতে সৌরবিদ্যুতের তার দিয়ে বেড়া নির্মাণ করা হবে। কাপ্তাইয়ে আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই সোলার ফেন্সিং নির্মাণ করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।’

সোলার ফেন্সিংয়ের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাতি এলাকায় প্রবেশের সময় পাওয়ার ফেন্সিংয়ের সুইচ দেয়া হবে। তখন ওই তারে প্রতি মুহূর্তে বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে। তবে কোনো প্রাণিই ওই বিদ্যুতের শকে মারা যাবে না। ভয়ে তারা এলাকা ত্যাগ করবে।’

সোলার ফেন্সিং প্রক্রিয়া নিয়ে হাতি গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান সরকার বলেন, ‘এই পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এটার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ সব সময় হাতি সোলার ফেন্সিংয়ের মাধ্যমে তাড়ানো যায় না। অনেক সময় হাতি ক্ষিপ্ত হয়ে সোলার ফেন্সিং ভেঙে ফেলে। তবে এটি মন্দের ভালো।’

কাপ্তাইয়ের আগে বাংলাদেশের শেরপুর এবং বান্দরবানে হাতি তাড়াতে সোলার ফেন্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং চলাচলের পথ হারিয়ে মূলত হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে আক্রান্ত হন বাসিন্দারা। পাশাপাশি মানুষের হাতে হাতিরও ক্ষতি হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে ১২টি হাতি হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি মারা গেছে বিদ্যুস্পৃষ্টে। বাকি চারটিকে গুলি করে মারা হয়েছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হাতির আক্রমণের শিকার হয়েছেন ৮৮ জন ব্যক্তি। এর মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ৫১ জন।

অধ্যাপক রায়হান সরকার বলেন, ‘দেশে হাতি চলাচলের পথে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠছে। রেললাইন, রাস্তাঘাট নির্মাণ হচ্ছে। টেকনাফে হাতির প্রবেশদ্বারে ব্লক করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়েছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি নতুন করিডোরের সন্ধানে হাতিগুলো এখন ছোটাছুটি করছে। এসব কারণে এখন মানুষের ওপর হাতির আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পর্যাপ্ত খাবার, বিচরণের স্থান ও চলাচল পথ পেলে কখনও হাতি লোকালয়ে আসবে না। হাতি খুবই শান্ত একটি প্রাণী। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পছন্দ করে। তাই হাতি রক্ষা করতে হলে এর বিচরণের স্থান সংরক্ষণ, চলাচলের পথ ও পর্যাপ্ত খাবারের যোগান দিতে হবে।’

আইইউসিএনের বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমীন বলেন, ২০১৯ সালে আইইউসিএনের গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে হাতি চলাচলের পথ ও বিচরণের বনভূমিগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছে হাতি। প্রবেশদ্বার বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং খাবার সংকটের কারণে নিয়মিতভাবে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বিপন্ন এশিয়ান হাতি।’

আইইউসিএনের হিসাবে, চট্টগ্রামের দক্ষিণ বন বিভাগে ৬৫টি হাতি রয়েছে। এরপরে কক্সবাজার দক্ষিণে ৬৩টি, উত্তরে ৫৪টি, লামা বন বিভাগের ৩০টি, বান্দরবানে ১১টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণে ২৮টি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তরে ১৩টি বুনো হাতি বসবাস করে।

আইইউসিএনের বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে এশিয়ান হাতি।

এ বিভাগের আরো খবর