মানিকগঞ্জে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও টিসিবির পণ্য না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পণ্য কিনতে আসা ব্যক্তিরা জানান, কিছুটা কম দামে পণ্য কিনতে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো যান তারা। তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও অনেক সময় খালি হাতে তাদের বাড়ি ফিরতে হয়। পণ্য দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় ডিলাররা স্বজনপ্রীতি করেন। আবার সিরিয়াল এগিয়ে অন্যরা পণ্য নিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, খোলা বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেশ কিছু দিন ধরেই জেলার নিম্ন ও স্বল্পআয়ের মানুষের ভিড় করছে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে। ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় রাতেও দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে। দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও লাইনের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। গাঁ ঘেষে দাঁড়িয়েই পণ্য নিচ্ছেন সবাই।
পৌরসভার বান্দুটিয়া এলাকার সাজেদা আক্তার বলেন, ‘তেল, চিনি ও ডাল নিতে আইছিলাম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কিছুই পাই নাই। বেশ কয়েক দিন আগেও রাতের বেলায় আইসা খালি হাতে চলে গেছি। গরমের মধ্যে অপেক্ষা করে ঘুইরা যাইতেছি, খুব খারাপ লাগতেছে।’
একই এলাকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ডিলারদের পরিচিত কেউ এলেই তাদের পণ্য দিয়ে দেয়। অথবা লাইন ভেঙে তাদের এগিয়ে দেয়া হয়। তারা নিরীহ মানুষ হওয়ায় কিছু বলতে পারেন না।
সদর উপজেলার কাফাটিয়া গ্রামের মরিয়ম আক্তার বলেন, ‘বাজারে তেল, চিনি, ডালের দাম বেশি। তাই একটু সাশ্রয়ের জন্য ১৪ কিলোমিটার দূর থেকে শহরে আসছি। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে সাড়ে ৩ ঘণ্টার মতো অপেক্ষার পর দুই কেজি করে চিনি, ডাল ও তেল পাইছি।’
সাটুরিয়ায় নয়াডিঙ্গী এলাকার নারগিস আক্তার বলেন, ‘স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে। একজনের আয়ে দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার চলে না। শুনছি কম দামে এখানে চাল-ডাল পাওয়া যায়, তাই আইছি। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বইসা আছি। কখন যে পামু জানি না।’
সদরের উকিয়ারা গ্রামের খোরশেদ আলম বলেন, ‘কম দামে সরকারি মাল নিতে আইসা দফারফা শেষ। হেই সকাল ১০টায় আইছি এখন বাজে ২টা। তারপরেও মাল পাইলাম না। আর কোনোদিন মাল নিতে আসুম না। এই রইদে আমরা খামাখা হয়রানি হইতাছি।’
মানিকগঞ্জে টিসিবির এক ডিলার জানান, টিসিবি থেকে প্রতিদিন একজন ডিলার ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ, ১ হাজার লিটার তেল, ৭০০ কেজি করে চিনি ও মসুর ডাল এবং ৪০০ কেজি ছোলা পায়। এসব পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ২০ টাকা, ছোলা ৫৫ টাকা, খেজুর ৮০ টাকা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
খোলা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, চিনি ৬৮-৭০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৭০-১০০ টাকা, খেজুর ৮৫-৮০০ টাকা এবং ১ লিটার সয়াবিন তেল ১১০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলায় টিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. নিজামুল ইসলাম জানান, টিসিবি তাদের যে পণ্য দেয় তাতে সাড়ে ৩০০ মানুষকে দিতে পারেন। কিন্তু পণ্য কিনতে আসেন ৫ শর বেশি মানুষ। তাই অনেকে খালি হাতে ঘুরে যান।
তিনি বলেন, ‘মানুষের মাঝে কোনো ধরনের ডিসিপ্লিন নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে ধাক্কা ধাক্কি করে। এখন সরকার যদি ডিলারদের বরাদ্দ আরেকটু বাড়ায়ে দেয় তাহলে ভালো হয়।’